ভুঁইফোঁড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির রাশ টানতে নতুন বিল আনছে রাজ্য সরকার। এ জন্য বিধানসভার দু’দিনের অধিবেশন ডাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই অধিবেশনে ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আনা পুরনো বিলটি প্রত্যাহার করে নতুন বয়ানে, নতুন বিল পেশ করা হবে।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “এই ধরনের সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কঠোর আইন আনতে চলেছে রাজ্য।” বাম আমলের বিলটি ফেরত চেয়ে আগেই রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সেই আর্জিতে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে জানিয়ে মার্চের শেষে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই পদ্ধতি মানতেই বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সরকারের আশা, চলতি পরিস্থিতির কথা বিচার করেই কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক এবং রাষ্ট্রপতি ভবন দ্রুত বিলটির অনুমোদন দেবে।
কিন্তু নতুন আইন হলে সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা লক্ষ লক্ষ মানুষ কি কোনও সুরাহা পাবেন? রাজ্যের প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের বক্তব্য, “নতুন আইন সারদা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। কারণ, বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পর যদি এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে একমাত্র সে ক্ষেত্রেই ওই আইন প্রয়োগ করা যাবে। পুরনো কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।” আইনজীবীরাও একই কথা বলছেন। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, দিল্লির ধর্ষণকাণ্ডের পরে কেন্দ্র ধর্ষণ-বিরোধী নতুন আইন করেছে। কিন্তু ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার হচ্ছে পুরনো আইনেই। কারণ, ঘটনার পরে নতুন আইন বলবৎ হয়েছে।
সারদা-কাণ্ডের ক্ষেত্রের একই জিনিস প্রযোজ্য। ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থা নিয়ন্ত্রণে ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য রাজ্য সরকার এখন যতই কঠোর আইন-ই আনুক না কেন, সারদা গোষ্ঠী তার আওতার বাইরেই থাকবে।
তবে প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতে নতুন বিল আনার উদ্যোগকেই হাতিয়ার করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তারা যে খড়্গহস্ত তা বোঝাতে এই বিল নিয়ে জেলায় জেলায় জেলায় জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, “সিপিএম এবং কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। আমাদের তার জবাব দিতে হবে।”
সরকারের এই নতুন বিল তৈরির সিদ্ধান্তকে অবশ্য অযথা কালক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, “ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এই ঘটনায় জড়িত। এই জন্যই আমরা বলছি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে।” ২০০৯ সালের বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি আদায়ের চেষ্টা হলে প্রক্রিয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ হত বলেই সূর্যবাবুর মত। (প্রসঙ্গত, তাঁর সোমবারের বক্তব্য কিঞ্চিৎ শুধরে সূর্যবাবু জানিয়েছেন, কেন্দ্র কিছু সংশোধন করার কথা বলার পরে ২০০৩ সালের বিলটি প্রত্যাহার করেই ২০০৯ সালে নতুন বিল পেশ করা হয়েছিল। আগের বিলের সংশোধনী হিসেবে নয়।)
বিল নিয়ে কালক্ষেপের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি কমিশন তৈরির সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু-ও এ দিন আরামবাগে বলেন, “রাজ্য সরকার তদন্তের জন্য কমিশন গড়ে ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়াটাই পিছিয়ে দিতে চাইছে। চিট ফান্ডের রমরমা রুখতে বাম আমলে বেশ কিছু আইন ছিল। সে সব খতিয়ে দেখতে পারত বর্তমান সরকার।”
কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। এ দিন তিনি বলেন, “কমিশন কি অপরাধীদের অনুসন্ধান করবে, নাকি তাদের বাড়ি তল্লাশি করবে, না তাদের গ্রেফতার করবে? কমিশনের কাজটা স্পষ্ট করে বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। গরিব মানুষের টাকা যদি কমিশন ফেরত দিতে না পারে, তা হলে এই কমিশন আমরা মানছি না।”
রাজ্যে আরও যে সমস্ত ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা আছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে বিজেপি। ওই সব সংস্থার আমানতকারীদের অর্থ তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সে ক্ষেত্রে আমানতকারীরা বাধা পেলে তাঁদের আইনি সহযোগিতা দেবেন বলেও ঘোষণা করেছেন।
|
অভিযোগ নিতে নয়া অফিস
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়ার জন্য রাজারহাটের ‘ফিনান্সিয়াল হাব’-এ অফিস খুলছে রাজ্য সরকার। তবে বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির অফিস হবে বিবাদী বাগের পাঁচ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে। ‘অন-লাইনে’ অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও করছে অর্থ দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দো্যপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকুন, উত্তেজনা ছড়াবেন না। ধৈর্য রাখুন। আমি আশ্বস্ত করছি, সরকার আপনাদের স্বার্থরক্ষার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেবে।” অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে শয়ে-শয়ে অভিযোগ জমা পড়বে। সেই কারণেই রাজারহাটে অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে এলাকাভিত্তিক অভিযোগ গ্রহণের দিনও ঠিক করে দেওয়া হবে। |