মেটাতে হিমসিম জেলা প্রশাসন
মুখ্যমন্ত্রীর সভার খরচ ১২ লক্ষ
মুখ্যমন্ত্রী সভা করে গিয়েছেন মাস তিনেক আগে। আর সেই সভা আয়োজনের খরচ মেটাতে গিয়ে এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে। গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগড় ব্লকের বেলদায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক জনসভা ছিল। সেই সময় মঞ্চ তৈরি থেকে রাস্তা সংস্কার, ক্লোজ সার্কিট টিভি বসানো সবই করতে হয়েছিল ব্লক প্রশাসনকে। সেই বাবদ ব্লক প্রশাসন ১৬ লক্ষ টাকার বিল (রিক্যুইজিশন) পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। প্রথমে এই বিল অনুমোদন করেনি জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের নির্দেশে ব্লকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। জানানো হয়, বিলটি পুনরায় খতিয়ে দেখা জরুরি। ঠিক কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মেনে পুনরায় বিল পাঠিয়েছে ব্লক প্রশাসন। তাতে খরচ বাবদ চাওয়া হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।
গত ১৬ জানুয়ারি বেলদায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা।—ফাইল চিত্র।
রাতারাতি ৪ লক্ষ টাকা খরচ কমল কী করে? নারায়ণগড়ের যুগ্ম বিডিও অনির্বাণ মজুমদার এর ব্যাখ্যা দিতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “ব্লক থেকে জেলায় টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবারই মেদিনীপুরে গিয়েছিলাম। রিক্যুইজিশনের বিষয়টি ফের জানিয়ে এসেছি।” তবে জানা গিয়েছে, যে ডেকরেটর, ঠিকারদারকে সভা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, ব্লক প্রশাসন থেকে তাদের কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। তাতেই খরচ কমেছে ৪ লক্ষ টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলদার সভার প্রস্তুতির সময় জেলা প্রশাসন থেকেই ব্লকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। সেই মতো মঞ্চ বাঁধা, মাইকের আয়োজন সবই করা হয়েছিল। সভাস্থলের পাশের রাস্তা মোরাম ফেলে সংস্কার করা হয়েছিল। ওই পথেই এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। ওই সভায় যাঁদের বিভিন্ন সামগ্রী, শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল প্রশাসনকে। মুখ্যমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে নারায়ণগড় ব্লক অফিসের একাংশে নতুন রংও করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সভা যখন হয়, তখন নারায়ণগড়ের বিডিও ছিলেন কল্যাণ দাস। গত মাসে তাঁর বদলি হয়েছে। এখন বিডিও’র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন যুগ্ম বিডিও অনির্বাণ মজুমদার। তাঁর কাছেই টাকার তাগাদা করছেন ঠিকাদাররা।
একটা সময় লাগাতার জেলায় জেলায় ঘুরে প্রশাসনিক জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরেও এসেছেন বার কয়েক। এই সব সভা থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ছাড়াও নানা প্রকল্পের চেক, জমির পাট্টা, ছাত্রীদের সাইকেল বিলি করা হয়েছে। বেলদার সভাটিও ছিল অনুরূপ। ওই সভার দশ দিন আগেই ৫ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে এসেছিলেন ‘জঙ্গলমহল বিবেক ছাত্র-যুব উত্‌সব’ উপলক্ষে। সেই উত্‌সবের খরচ নিয়েও শোরগোল পড়েছিল। প্রশ্ন ওঠে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে এই উত্‌সবের কী প্রয়োজন!
বেলদার সভায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে রাজকোষ শূন্য, ঋণের বোঝা বলে চেঁচাচ্ছেন। তারপরেও তাঁর সভার আয়োজন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবের মতে “অনুষ্ঠান ও সভার পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মানুষ টানা যায়। কিন্তু উন্নয়ন হয় না।” আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “এই সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই, শৃঙ্খলা নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “অর্থ অপচয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে রাজ্য সরকার যা উন্নয়ন করছে তা কল্পনারও অতীত।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.