গোপনে নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বাবা, পাত্র ও ঘটককে ধরল পুলিশ। সোমবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত এলাকার একটি বাড়ি থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় নাবালিকাকে। ধৃতদের নাম খলাই রায়, সুকেশ সিংহ যাদব ও শিবানী বর্মন। পেশায় চাষি খলাইবাবু ওই নাবালিকার বাবা। সুকেশবাবু পাত্র ও শিবানি দেবী ঘটক। সুকেশ ও শিবানির বাড়ি উত্তরপ্রদেশে ফরিদাবাদ জেলার রাজকোট এলাকায়। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘চাইল্ড ম্যারেজ প্রোটেকশন’ আইনে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। পাত্রের বিরুদ্ধে পৃথক ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন নাবালিকাকে জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ, মঙ্গলবার অভিযুক্তদের রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হবে। সেই সঙ্গে নাবালিকার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে।
পুলিশ জানায়, ধৃত শিবানীদেবীর বাপের বাড়ি শীতলপুর এলাকায়। রাজকোট এলাকায় শ্বশুরবাড়ি। ২৮ বছর বয়সী পেশায় চুড়ির কারখানার কর্মী সুকেশবাবু তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। অন্য দিকে খলাইবাবুর স্ত্রী ছাড়া চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অভিযোগ, গত ১০ এপ্রিল শিবানি সুকেশকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়িতে যান। পরের দিন খলাইবাবুকে তাঁর বড় মেয়ের সঙ্গে সুকেশবাবুর বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের খরচ বাবদ শিবানি দেবী খলাইবাবুকে পাঁচ হাজার টাকা দেন। এর পরে গত ১৬ এপ্রিল রাতে খলাইবাবুর বাড়িতে সুকেশবাবুর সঙ্গে বালিকার বিয়ে দেওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল খলাইবাবু রায়গঞ্জ জেলা আদালতে এফিডেফিটের মাধ্যমে হলফনামা দিয়ে মেয়ের ম্যারেজ ডিক্লেয়ারেশন সার্টিফিকেট বার করেন বলে অভিযোগ। ওই সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে নাবালিকার বয়স ২০ বছর দেখানো হয়েছে। ওই ডিক্লেয়ারেশনকে বৈধতার অনুমোদন দেন জেলা কোর্টে নোটারি আইনজীবী সুভাষচন্দ্র বর্মন। সুভাষবাবু বলেন, “খলাইবাবু নিজের মেয়ের বয়স ২০ বছর বলে দাবি করেন। তাঁর কথার ভিত্তিতে ম্যারেজ ডিক্লেয়ারেশনকে বৈধতা দিয়েছি। অভিভাবকদের কথায় ভিত্তি করে ওই কাজ করা হয়। পাত্র বা পাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্রের দরকার হয় না।”
এ দিন হেমতাবাদ থানার ওসি কৃষ্ণেন্দু দাস জানিয়েছেন, নাবালিকার বয়সের সরকারি প্রমাণপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ওর বর্তমান বয়স ১৪ বছর ৬ মাস। কেন এ বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলেন? নাবালিকার বাবা খলাইবাবু বলেন, “জমি চাষ করে কষ্টে স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকি। প্রতিবেশী শিবানীর প্রস্তাবে বড় মেয়েকে সুকেশের সঙ্গে বিয়ে দিই। ১৮ বছরের আগে যে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না সেটা জানতাম না।” ধৃত সুকেশবাবু বলেন, “অসুস্থ মা ও ভাই আছে। ওঁদের দেখাশোনার জন্য শিবানি দেবীর প্রস্তাব মতো বিয়ে করেছি।” আর শিবানিদেবী জানান, খলাইবাবু বড় মেয়ের জন্য তাঁকে পাত্র খুঁজতে বলেছিলেন। তাই সুকেশকে সঙ্গে করে এনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেছেন, “বিয়ের খরচের পাঁচ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে।” |