সারদা-কাণ্ডের জেরে অন্য ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাতেও ক্ষোভ-বিক্ষোভের ধারা অব্যাহত সোমবারেও।
ডুয়ার্সের একটি বেসরকারি ভুইঁফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে দলের এক স্থানীয় নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ‘অস্বস্তিতে’ জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই সংস্থার নামে থাকা মালবাজারের অফিসটির ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে সোমবার পুলিশ ‘সিল’ করে দিয়েছে। সংস্থার তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের নাম ভাঁড়িয়ে কিছু লোকজন অফিসটি খুলেছিলেন বলে তাঁরাই থানায় জানিয়েছেন। ওই সংস্থার অন্যতম কর্তা হিসেবে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি শশাঙ্ক রায় বাসুনিয়ার নাম সামনে এসেছে। তা নিয়ে দলীয় পর্যায়ে খোঁজখবরও শুরু হয়েছে বলে দলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক জানিয়েছেন। তবে তৃণমূল নেতা শশাঙ্কবাবু বলেছেন, “আমি মূলত সংস্থার এজেন্ট মাত্র। তবে কাজ এবং অভিজ্ঞতার জন্য আমাকে সংস্থা টপ লিডার করেছে। সংস্থা নিয়ে কোনও গরমিল নেই। সকলের টাকাই সুরক্ষিত রয়েছে। আমাদের সংস্থার নামে মালবাজারে ভুয়ো অপিস খোলা হয়েছিল বলে পুলিশকে বলা হয়। সেটি বন্ধ হয়েছে।” তবে সংস্থার চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুজন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। |
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “শশাঙ্কবাবু সংস্থার এজেন্ট বলে জানিয়েছেন। তাঁর ছেলে সংস্থার কর্মী। তিনি সংস্থার মালিক কি না এ বিষয়ে দল জানে না। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।” যদিও সিপিএমের তরফে ফের তৃণমূলের সঙ্গে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির যোগাযোগ নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলের তরফে আগেই বলা হয়েছে তৃণমূলের মদতেই সব সংস্থাগুলি গজিয়ে উঠেছে. নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই সব পরিষ্কার হবে।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মালবাজারে ওই সংস্থার একটি অফিস সিল করা হয়েছে। দু’জনকে আটক করা হয়েছে। সংস্থার তরফেই মালবাজার অফিসটি ভুয়ো বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।”
শিলিগুড়িতে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। দু’টি সংস্থার আমানতকারীরা বিক্ষোভে সামিল হন। রবিবার রাতে দেশবন্ধুপাড়ায় একটি সংস্থার এক এজেন্টের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টাকা ফেরত চান আমানতকারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিন দুপুরে শিলিগুড়ির পাকুড়তলায় একটি সংস্থার অফিসেও গিয়েও টাকা ফেরতের দাবি করেন কয়েকজন আমানতকারীরা। দুই আমানতকারী বাপি দাস ও বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমাদের বেশ কয়েক হাজার টাকা রয়েছে। ভরসা পাচ্ছি না। টাকা চাইতে গেলে তারা না করে দেন। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।” ওই সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন। কোনও সমস্যা হবে না।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কের কাছে একটি সংস্থার এজেন্টরা সোমবার মহকুমাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। ২৫ মার্চ রাতে অফিসে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান মালিক এমন অভিযোগ করেন এজেন্টরা। আমানতকারীদের চাপে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে গিয়েছে বলে জানান এই সংস্থায় এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বাতাসির সুকুমার মণ্ডল। তাঁদের অভিযোগ গত ২৬ মার্চ থেকে অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২৭ মার্চ এফআইআর করা হলেও এখনও মালিককে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তাঁরা। মালিক প্রসেনজিৎ মজুমদার শিলিগুড়ির বাসিন্দা হলেও বর্তমানে শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান তাঁরা। প্রায় একমাস থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে এই আর্থিক সংস্থাটি। কোটি টাকা আটকে আছে বলে জানান সংস্থার এজেন্ট বিশ্বজিৎ ভদ্র। এ দিন মহকুমা শাসকের দফতরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুমন বাগদাসের কাছে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
কোচবিহার রাজমাতা দিঘি সংলগ্ন এলাকায় একাধিক অর্থ লগ্নি সংস্থার অফিসের সামনেও আমানতকারীদের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় যুব কংগ্রেস। মাথাভাঙা শহরে একটি লগ্নি সংস্থার ম্যানেজারকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায় আমানতকারীরা। কয়েকমাস আগে উধাও হয়ে যাওয়া একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার মর্গ লাগোয়া এলাকায় কেনা জমিতেও ঝান্ডা পুঁতে দেয় যুব কংগ্রেস সমর্থকরা।
সারদার পর মালদহ থেকে আরেকটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা অফিস বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে ওই সংস্থার শতাধিক এজেন্ট ইংরেজবাজার থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পরে ১০৪জন এজেন্ট ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিলিগুড়ি নিবাসী প্রসেনজিৎ মজুমদার, চারজন ডিরেক্টর অমিত মজুমদার, সুব্রত মজুমদার, অসীম দাস, নজরুল ঝা ও মালদহ অফিসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুকান্ত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সিঙ্গাতলায় ওই সংস্থার অফিসে হানা দিলেও কাউকে পায়নি।বালুরঘাট থানাতেও একটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের অন্তত ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে আর ফেরত দিচ্ছে না সংস্থাটি। |