ফকিরপুরে আক্রান্ত ৪০
অকেজো চার নলকূপ, আন্ত্রিক গ্রামে
০ নম্বর রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের উপর মহম্মদবাজার থানার সোঁতশাল মোড়। অদূরেই পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চল। রাস্তার ধারে তখন তোড়জোর চলছে। রবিবার বিকেলে এই এলাকারই আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে বছর এগারোর এক কিশোরী। সেই কিশোরী সালমা খাতুনের মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য এলাকার মানুষকের ব্যস্ত হতে দেখা গেল। সোঁতশাল গ্রামের ফকিরপুর পাড়া এলাকার প্রায় ৪০ জনেরও বেশি বাসিন্দা এখন আন্ত্রিকে আক্রান্ত। জিজ্ঞেস করতেই ব্যস্ততার মাঝেই ওই পাড়ার পথটা দেখিয়ে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শফিক শেখ বললেন, “একটু গিয়ে দেখে আসেন, দেখবেন কেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে আমরা বেঁচে আছি।”
আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে ওই কিশোরীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জহিরুল আলম। তিনি বলেন, “প্রথমে মনে হচ্ছিল নোংরা জল-ব্যবস্থার জন্য আন্ত্রিক দেখা গিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে খাদ্য বিষক্রিয়া জনিত কারণেই আন্ত্রিক ছড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
বাসন মাজা, স্নান, কাপড় কাচা— সবই হয় এই পুকুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
একটা এবড়োখেবড়ো কাদামাখা কাঁচা রাস্তা। তার উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই মনে হচ্ছিল, গরমেই যদি এই হাল তাহলে বর্ষার সময়ে রাস্তাটার কী অবস্থা হয়! জাতীয় সড়ক থেকে ফকিরপুর পাড়া যেতে রাস্তার মাঝখানেই আবার একটি নিকাশি নালা। সেই নালার উপরেই জমে আছে গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন শৌচকর্মের জল। কোনও রকমে নালা পার করে মৃত সালমা খাতুনের বাড়ির কাছে পৌঁছনো গেল। নজরে পড়ল, অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে এলাকার মানুষের ব্যবহারের জন্য তৈরি সরকারি নলকূপ। স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুল শেখ, তাজেল শেখদের দাবি, “গত নয় মাস ধরে নলকূপ খারাপ। শুধু এটাই নয়, এলাকার চারটি নলকূপই খারাপ হয়ে পড়ে আছে। পঞ্চায়েতে বারবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।” তাঁদের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত সমিতির কাছে গেলে তারা বলছেন, আমাদের এলাকার জন্য নাকি নতুন নলকূপ বসানোর সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। নতুন তো বসেইনি, পুরনোগুলোও এখনও ঠিক হল না!”
এলাকাবাসীর ভরসা বলতে পাড়ার কাঁকড়ো পুকুরের জল। সেই পুকুরের জলে নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকলেও এলাকার ১৫০টি পরিবার দৈনন্দিন গৃহস্থালীর কাজ থেকে জামাকাপড় কাচা, থালা-বাসন মাজা সবই সেখানেই করতে হচ্ছে। “এমন পরিস্থিতিতে বাস করলে কার না পেটের রোগ দেখা দেবে!” বলছেন আর এক বাসিন্দা আজিজুন্নেশা বিবি। গত তিনদিন ধরে পেটে-মাথায় ব্যাথা, বমি ভাব নিয়ে বাড়ির মেঝেতে শুয়ে আছেন তিনি। রবিবার পাড়ারই মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আঁতকে উঠেছিলেন। রাতের দিকে এলাকায় বিডিও, স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে অনেককে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠালেও আজিজুন্নেশা যাননি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই শরীরটা আরও বিগড়োনোয় স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন। এ দিনই গ্রামের বধূ রসুলা বিবি, মোসলেমা বিবি, কিশোরী নাজমিনা খাতুন-রাও অ্যাম্বুল্যান্সে করে কেউ স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কেউ ব্লক প্রাথমিক কেউ বা সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সিউড়ি সদর হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন সকালে গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, তখনও পর্যন্ত এলাকায় ব্লিচিং পাইডার ছড়ানো হয়নি। কেবল মাত্র পানীয় জলে দেওয়ার জন্য ‘হ্যালোজেন ট্যাবলেট’ বিলি করা হয়েছে। মহম্মদবাজার ব্লকের বিডিও সুজয় বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, “চারটে নলকূপ সংস্কার করা হবে। পুকুরের পাড় বাঁধানোর চেষ্টা চালানো হবে। এলাকায় ব্লিচিং পাউডার দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।” অন্য দিকে, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জহিরুল আলম জানিয়েছেন, ওই এলাকায় একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.