গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন পরের বছর সময় থাকতেই রোগ প্রতিরোধে উদ্যোগী হতে হবে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরকে। মৌখিক সেই নির্দেশে আটকে না থেকে কতটা কাজ এগোলো, এ বছর তা নিজেই সরেজমিন দেখতে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে কে কী আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে সোমবার মহাকরণে ওই জরুরি বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। ছিলেন হাওড়ার জেলাশাসক এবং বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। সেখানেই কলকাতা পুরসভা যে ভাবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে নেমেছে, অন্যদের সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে নির্দেশ দেন মমতা। |
মহাকরণ সূত্রের খবর, গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় উদ্বেগে ছিল রাজ্য প্রশাসন। কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকায় মশাবাহিত ওই রোগ বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সময়ে কাজ হয়নি কেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ে জরুরি বৈঠক ডেকে তিনি বলেছিলেন বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে নামতে হবে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরকে।
সেই কাজ ঠিক মতো হল কি না, তা জানতেই এ দিন সবাইকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। মহাকরণ সূত্রের খবর, ডেঙ্গি দমনে কলকাতা পুরসভার কাজের পদ্ধতি পছন্দ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। আর তা মেনে স্বাস্থ্য দফতর-সহ অন্য পুরসভা গুলিকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, জানুয়ারি মাস থেকেই মশাবাহিত ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া দমনে কাজ শুরু করেছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই শহরের ১৪১টি ওয়ার্ডে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। কোথায় কোন মশার লার্ভা আছে, কী ভাবে তা জন্মাচ্ছে— এ সবের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার কাজও চলছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে হাওড়া পুরসভায়। ওই পুরসভাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার জন্য হাওড়া জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ দিন হাওড়ার জেলা শাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে যে সব এলাকায় ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ প্রতি বছর বেশি হয়, সেই সব এলাকায় ভেক্টর কন্ট্রোলের পাশাপাশি লিফলেট বিলির কাজ শুরু করতে হবে। এমনকী এ ক্ষেত্রে পুরসভার যদি টাকার প্রয়োজন হয়, সেই টাকা রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর থেকে দেওয়া হবে বলে জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি সল্টলেকে ডেঙ্গির প্রভাব যাতে কমানোর লক্ষ্যে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং এলাকার বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করার জন্য পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মশা দমনে তেল দেওয়া ও ধোঁয়া দেওয়ার কাজে যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে, তা দেখতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে কেষ্টপুর খালে জল ছাড়ার কথাও। অতীনবাবু জানান, কলকাতার খালগুলিতে মশা মারার জন্য ভুটভুটি ব্যবহার হচ্ছে। এতে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও এ পর্যন্ত প্রায় ছ’লক্ষ বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে রোগ প্রতিরোধের প্রচার করেছেন।
গত বছর সল্টলেক এবং কলকাতা পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে মশা মারতে পুরসভা সেভাবে উদ্যোগী হয়নি। তেল দেওয়ার কাজও প্রায় হয়নি। ওই মরসুমে বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে রোগীর ভিড়ে শয্যা পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি চিড় খায়। তাই এ বার আগাম সতর্ক করা হচ্ছে দলের পুরসভার চেয়ারম্যানদের। বিশেষত সল্টলেকে বেশি করে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |