নেই বিদ্যুৎ, পরিস্রুত পানীয় জল। অধরা রোজগারের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শিক্ষার সুযোগ কিছুই নেই মালবাজারের কাঠামবাড়ি জঙ্গল ঘেরা মেচবস্তিতে। নিরুপায় বাসিন্দারা পেটের ভাত জোটাতেই তাই চোলাই মদ তৈরির কাজ বেছে নিয়েছেন।
কত দিন আগে ওই বস্তি গড়ে উঠেছে তা বলতে পারেননি বাসিন্দারা। কয়েক জন জানান, স্বাধীনতার অনেক আগে জঙ্গলের কাজের জন্য তাঁদের পূর্বপুরুষদের এখানে বসানো হয়। সেই থেকে বসবাস চলছে। কাঠামবাড়ি জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে ওই বস্তিতে ষাটটি পরিবার রয়েছে। কিন্তু তাঁদের জঙ্গলে কাজ নেই। দুর্গম এলাকায় ওই বস্তি যে ভরদুপুরেও গা ছমছম করে। রাস্তা বলতে জঙ্গল চিরে যাওয়া খানা খন্দে ভরা কাঁচা রাস্তা। বিদ্যুৎ-ফেন্সিং দিয়ে ঘেরা বস্তিতে বাইরে থেকে কেউ গেলে ঘর থেকে প্রত্যেকে বেরিয়ে আসে। দেখেন আগন্তুককে। জানতে চান অনেক কিছু। সচরাচর এলাকায় কেউ যায় না। তাই সন্দেহ হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ধীরেন শৈব্য বলেন, “স্বাধীনতার অনেক আগে বস্তি গড়ে ওঠে। আগে জঙ্গলে অনেক কাজের সুযোগ ছিল। এখন কিছু জোটে না। এমনকী কেউ খোঁজ নিয়ে দেখে না আমরা কেমন আছি। তাই বাইরের কাউকে দেখলে সন্দেহ হয়।” বস্তি এলাকায় একমাত্র জীবিকা যে চোলাই মদ তৈরি তা কেউ অস্বীকার করেন না। যেমন, দীপক শৈব্য বলেন, “চোলাই ছাড়া অন্য কাজ তো নেই।” নিকটবর্তী হাসপাতাল ওদলাবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১২ কিমি। ৪ কিমি ঘন জঙ্গল পথ পার হয়ে তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রাস্তায় পৌঁছতে হয়। রাতে কেউ অসুস্থ হলে ওই রাস্তা ধরে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। স্কুল আছে রাজাডাঙায়। দূরত্ব ৭ কিমি। হাতির ভয়ে ছেলেমেয়েদের বাইরে স্কুলে পাঠাতে চায় না কেউ। তাঁদের কাছে দূরে পড়তে যাওয়ার চেয়ে বাবা মার সঙ্গে কাঠ কুড়োতে যাওয়া ভাল।
শুধু কী জঙ্গল পথে। বস্তি জুড়ে চলে হাতির উপদ্রব। ওই কারণে ধান ও সবজির চাষ সম্ভব হয় না। চোলাই বিক্রি করে যে পয়সা জোটে তা দিয়ে চাল কিনে আনে প্রত্যেকে। উন্নয়ন বলতে বনদফতর সম্প্রতি ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে কয়েকটি বাড়ি তৈরি করেছে। রয়েছে বন দফতরের একটি ছোট কমিউনিটি হল। জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। শুধু হয়নি রোজগারের ব্যবস্থা। আবগারি দফতরের মালবাজারের ওসি সুপ্রকাশ কুন্ডু বলেন, “মেচবস্তির প্রায় প্রতিটি ঘরে চোলাই তৈরি হয়। কয়েকবার তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু ফের একই পরিস্থিতি হয়েছে। এলাকায় সচেতনতা শিবিরও করা হয়েছে।” দফতরের কর্তাদের কয়েকজন মনে করেন উন্নয়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হলে পরিস্থিতি পাল্টাবে না। যদিও রাজা়ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আঞ্জুমা খাতুন অনুন্নয়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “অনেক কাজ হয়েছে ওই বস্তিতে।” মালবাজারের মহকুমাশাসক নারায়ণ বিশ্বাস আবশ্য বলেন, “ওই বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।” |