উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগত দুই যুবকের হাতে দুই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার ঘটনাটি ঘটলেও সোমবার ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে সরব হন। ওই দিন গবেষণার কাজ সেরে ফেরার পথে বাইক আরোহী দুই যুবক তাঁদের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাররত ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ পড়ুয়ারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌনী মিছিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। শ্লীলতাহানির অভিযোগে পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে। ঘটনার পরে অভিযান চালিয়ে বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরার অভিযোগে বহিরাগত অন্তত ৬ জন যুবককে ধরেছে পুলিশ। এ দিন নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন উপাচার্য সমীর কুমার দাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অলক মজুমদার কিছু বলতে চাননি। তিনি জানান, যা বলার উপাচার্যই বলবেন। উপাচার্য বলেন, “অভিযোগ পেয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।” ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ওজি পাল বলেন, “পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে।
অভিযোগ, গত শুক্রবার কাজ সেরে গবেষণাগার থেকে ফিরতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা বেজে যায় উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ওই ছাত্রীদের। দুই ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রিসার্চ স্কলার’। তাঁদের এক জন হস্টেলে থাকেন। অন্য জন মেডিক্যাল মোড়ের বাসিন্দা। গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে একজন বিদ্যাসাগর মঞ্চের সামনে দিয়ে হেঁটে হস্টেলে যাচ্ছিলেন। অন্যজন রামমোহন মূর্তির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন দু’নম্বর গেটের দিকে। আচমকা দুই বাইক আরোহী ছাত্রীদের উত্যক্ত করে। বিদ্যাসাগর মঞ্চের কাছে থাকা ছাত্রীর হাত ধরে টেনে তাকে শালবনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রী চিৎকার শুরু করলে বাইক আরোহীরা পালায়। অন্য ছাত্রীটিকে ধাক্কা দিয়ে তিনি হাতে থাকা ছাতা দিয়ে মারতে উদ্যত হলে অভিযুক্তরা পালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। রিসার্চ স্কলার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনুরাগ চৌধুরী জানান, এ মাস দুয়েকের মধ্যে আরও দু’বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মূলত বিজ্ঞান বিভাগের মহিলা রিসার্চ স্কলাররাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্য পদক্ষেপ করেছেন। নজরদারি যাতে সর্বদা থাকে সেই দাবি জানিয়েছি।”
ছাত্র সংসদের অভিযোগ, গত ১২ এপ্রিলও রিসার্চ স্কলার এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে সাইকেল আরোহী এক যুবক। চিৎকারে সাইকেল ফেলে ওই যুবক পালায়। সাইকেলটি নিরাপত্তা বিভাগ আটক করে। আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের কাছে এক ছাত্রীকে বাইক আরোহীরা ধাক্কা দিয়ে পালায়। পর পর ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার বিষয়টি সে ভাবে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্যই বহিরাগতরা সুযোগ নিচ্ছে বলে পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রোনাল্ড দে বলেন, “ক্যাম্পাসে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে।” |