পরিস্থিতির চাপে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন দীনবন্ধু পাল নামে সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্ট। সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে অবস্থান বিক্ষোভ দেখিয়ে শিলিগুড়ি থানায় যাওয়ার সময় অসুস্থ বোধ করতে থাকেন শিলিগুড়ির শান্তিনগরের বাসিন্দা ওই এজেন্ট। শিলিগুড়ি থানায় বিক্ষোভ দেখানোর সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর বাড়ি ফেরার সময় সাইকেলে উঠতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের একাংশ তাঁকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার পালানোর ঘটনা এবং তাদের বিভিন্ন শাখা বন্ধ হওয়ার খবরে হইচই শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়েই। কী ভাবে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবেন তা ভেবেই আন্দোলনে নামে এজেন্টদের একাংশ। দীনবন্ধুবাবুও এ দিন অন্য এজেন্ট এবং আমানতকারীদের সঙ্গে দাবি জানাতে শিলিগুড়ি থানায় গিয়েছিলেন। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে পাশে থাকা এক আমানতকারী নিমাই বিশ্বেশর্মা তাঁকে তোলেন। জয়ন্ত দাস, ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন আন্দোলনকারী দীনবন্ধুবাবুকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁকে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। |
এ দিন অসুস্থ দীনবন্ধুবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে এলেও বেশ কয়েকজন আমানতকারী সেখানে দাঁড়িয়ে অসুস্থ দীনবন্ধুবাবুর স্ত্রী রমাদেবীর কাছেও তাদের টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেন। আমানতকারীদের একাংশের বক্তব্য, “এখন দীনবন্ধুবাবু অসুস্থ। কিন্তু সুস্থ হয়ে ফিরে তিনি যেন সবার টাকা ফিরিয়ে দেন।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দীনবন্ধুবাবু সব্জি বিক্রেতা। বাড়তি রোজগারের আশায় সারদা-সহ দু’টি সংস্থার এজেন্ট হন। ভাল কমিশন আসছে দেখে পরে সব্জির ব্যবসা ছেড়ে দেন। ১৪ জন আমানতকারীর প্রায় ২২ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। সারদা গোষ্ঠীতে রয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। অন্য একটি সংস্থায় আরও ৭ লক্ষ টাকা জমা দেন। ওই সংস্থাও গত কয়েক মাস ধরেই আমানতকারীদের মেয়াদ শেষ হওয়া টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ‘এখন কী হবে?’ বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রমা দেবী।
আমানতকারী নিমাইবাবু বলেন, “আমার মেয়ের বিয়ে। আধপেটা খেয়ে দীনবন্ধুর কথায় দু’দফায় মোট ৫০ হাজার টাকা রেখেছি। টাকা না পেলে আমার চলবে না। তাই দীনবন্ধুর সুস্থ থাকা জরুরি। যে করেই হোক আমার টাকা চাই।” এই পরিস্থিতে বিব্রত হয়ে পড়েছেন রমাদেবীও। শিলিগুড়িতে সারদা গোষ্ঠীর কার্যালয় বন্ধ হয়ে পড়ায় আমানতকারীদের বোঝাতে তিনি সমস্যায় পড়েছেন। ছেলে তাপস মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। রমাদেবীর কথায়, “পরিস্থিতির জেরে ছেলেমেয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না। সারদা গোষ্ঠী আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দিলে বাড়ি বিক্রি করে দিতে হবে। আমাদেরও মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই।” |