মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমের দেওয়া স্কলারশিপের বহু চেক বাউন্স করেছে। এ ঘটনায় সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের একাংশ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনিও এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। সংখ্যালঘু ছাত্রদের স্কলারশিপের জন্য টাকার অভাব নেই দাবি করে আবু আয়েশ মণ্ডল বলেন, “বাম আমলে বহু চেক বাউন্স করত। কিন্তু তৃণমূল সরকারের আমলে আগে এই ধরনের অভিযোগ ওঠেনি। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” এ ঘটনার পিছনে বাম আমলের কিছু সরকারি কর্মীর হাত রয়েছে বলে আবু আয়েশ মণ্ডলের অভিযোগ। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে দু’বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে স্কলাপশিপ দিচ্ছে। তাই সরকারকে বদনাম করতে এক শ্রেণির কর্মচারি এমন ভাবে চক্রান্ত করছে, যাতে ছাত্রদের চেক পেতে দেরি হয় বা বাউন্স করে।” একদা সিপিএম বিধায়ক আবু আয়েশের মতে, “চক্রান্তে সামিল এই কমর্চারিরা সকলেই সিপিএম কর্মী। বাম আমলে এঁরা সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমে চাকরি পেয়েছেন।”
আবু আয়েশের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “সব ব্যাপারেই চক্রান্ত দেখা তৃণমূলের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে!” সেলিম আরও বলেন, “তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে আবু আয়েশ তো দীর্ঘ দিন আমাদের দলে ছিলেন। রং দেখে যে কর্মী নিয়োগ করা হয়নি, তা উনি ভালই জানেন। তৃণমূল সরকারের অপদার্থতা ঢাকতে এখন উনি অবান্তর অভিযোগ করছেন।” তবে, নানা কারণে বাম আমলেও যে চেক যে বাউন্স করেছে সেলিম তা স্বীকার করে বলেছেন, “চেক বাউন্স করলেও টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয়নি।”
সংখ্যালঘুদের উন্নতির জন্য মূলত কেন্দ্রের দেওয়া টাকাই নিগমের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়। এর জন্য অন-লাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। স্কুল পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি থেকে আরম্ভ করে স্নাতকোত্তর এমনকী পিএইচডি করার জন্যও টাকা দেওয়া হয়। আগে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বরের ভূমিকা ছিল। কিন্তু বর্তমানে সকল ছাত্রছাত্রীকেই টাকা দেওয়া হয়। সামান্য সুদে ঋণ হিসেবে এই স্কলারশিপের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকার সিংহভাগ কেন্দ্র দিলেও একাংশ ম্যাচিং-গ্রান্ট হিসেবে রাজ্য সরকারকেও দিতে হয়। বর্তমান সরকারের আমলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বছরে ৭৯০০ এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বছরে ৫২০০ টাকা স্কলারশিপ দেওয়া হয়। মাধ্যমিক পর্যন্ত দেওয়া হয় এক হাজার টাকা।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, চেক বাউন্স করায় ব্যাঙ্ক তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ফাইন’ বাবদ টাকা কেটে নিয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানিয়েছেন, ভবানীভবনে সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমের অফিসে অভিযোগ জানানো হলে বাউন্স করা চেক তাঁদের পুনরায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ফাইন’ বাবদ টাকা কাটায় বহু ছাত্রই ভয় পেয়ে দ্বিতীয় বার চেক জমা দেয়নি।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হয়েছে। কেন চেক বাউন্স করল, তার কারণ হিসেবে একাধিক ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, যে তারিখে চেক জমা পড়েছে, সেই তারিখে নিগম থেকে ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েনি। সরকারি পরিভাষায় ফান্ড রিলিজ হয়নি। বাম আমলেও এ ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল আমলেও ঘটল। |