লোভের ফাঁদে সর্বস্বান্তরা দিশা পেলেন না মুখ্যমন্ত্রীর কথায়
ম সময়ে অনেক বেশি টাকা পাওয়ার লোভেই বহু মানুষ সর্বস্ব লাগিয়েছিলেন সারদার বিভিন্ন স্কিমে। ব্যাঙ্ক-ডাকঘর যেখানে ৯ থেকে ৯.৫ শতাংশ সুদ দেয়, সেখানে সারদা কোথা থেকে এত চড়া হারে সুদ দিয়ে যাবে, তা ভেবেও দেখেননি তখন। এজেন্টরাও মোটা কমিশনের লোভে কোটি কোটি টাকার লগ্নি করিয়েছেন। এখন সুদীপ্ত সেন সংস্থা গুটিয়ে ফেরার হয়ে যাওয়ার পরে টাকা কোথা থেকে ফেরত পাবেন, সেই চিন্তায় মাথায় হাত লক্ষ লক্ষ মানুষের। এ ক’দিন তাঁরা তাকিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। ‘দিদি, আমাদের বাঁচান’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায়ও নেমেছেন। কিন্তু সোমবার মহাকরণে মমতা বলেছেন, “যা গেছে তা গেছে। ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন।” এই কথার পরে আর কোনও দিশাই দেখতে পাচ্ছেন না আমানতকারী থেকে এজেন্ট, কেউই।
কান্নার মুখ। সোমবার কলকাতার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির শিকার কারা? প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, শুধু অল্পশিক্ষিত গ্রামের মানুষরাই যে কম সময়ে প্রচুর টাকা পাওয়ার লোভে তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। ব্যাঙ্কের কর্মী, শহরের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকও একই অলীক স্বপ্ন দেখেছেন। অর্থনীতির যাবতীয় যুক্তি-বুদ্ধির বাইরে গিয়ে বছরে ১২৫% পর্যন্ত সুদের লোভ দেখিয়েছে কোনও কোনও ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা। আর তাতে সাড়া দিয়ে লগ্নি করেছেন তাঁরা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তো সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন ওই সব সংস্থার এজেন্টদের হাতে।
প্রশাসনের আর একটি অংশ অবশ্য বলছেন, শুধু গ্রাহকদের লোভই দায়ী নয়। তাঁদের বক্তব্য, ডাকঘরে গিয়ে মানুষ যথাযথ সাড়া পান না। ডাকঘরের যাঁরা এজেন্ট, তাঁদের অনেকেই এখন আবার বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থারও এজেন্ট। কারণ, সংস্থাগুলি অনেক বেশি কমিশন দেয়। এবং তা-ও দেয় নগদে, হাতে হাতে। ফলে তাঁরাও ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয় করানোর বদলে এই সব সংস্থার জন্য লগ্নি টানতে কোমর বেঁধেছেন। গ্রামের মানুষের কাছে গিয়ে বিরাট টাকা ফেরত পাওয়ার টোপ দিয়েছেন। গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষও ডাকঘর বা ব্যাঙ্কে গিয়ে দশ রকম আইনি হ্যাপা সামলানোর বদলে ঘরে বসে বিরাট টাকা পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি। প্রশাসনের ওই কর্তাদের বক্তব্য, এই অবস্থায় ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় কর্মসূচিকে ঢেলে সাজলে কিংবা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি সরল করলে ওই সংস্থাগুলির গ্রাস থেকে মানুষকে অনেকটাই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।
মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন সাধারণ মানুষকে স্বল্প সঞ্চয়ে বেশি করে টাকা রাখতে অনুরোধ করেন। বলেন, “সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করব স্বল্প সঞ্চয়ে টাকা রাখতে। কোনও জায়গায় টাকা রাখার আগে ভাল করে খোঁজখবর নিন। গরিব মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে, সেটা খারাপ লাগছে। ধাপে ধাপে যতটা পারি চেষ্টা করব।” তবে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তিনি যে কঠোর হবেন, তা বুঝিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নই।”
এই ধরনের সংস্থাগুলির রমরমার জন্য সব দায় মুখ্যমন্ত্রী চাপিয়েছেন কেন্দ্রের উপরেই। তাঁর যুক্তি, “কেন্দ্র স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমিয়ে দেওয়ার পরেই এ ধরনের সংস্থায় লগ্নির প্রতি ঝোঁক বেড়েছে সাধারণ মানুষের।” তাঁর আরও বক্তব্য, “এই সংস্থাগুলি কোম্পানি আইনে নথিভুক্ত হয়। পনেরো মিনিটে অনলাইনেই নথিভুক্ত হওয়া যায়। এ তো কেন্দ্রেরই নিয়ম। তাই যাবতীয় দায় তাদেরই।”
রাজ্য সরকারের পক্ষে যুক্ত দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমার পক্ষে তো সম্ভব নয়, সারা রাজ্যে কোথায় কী হচ্ছে, তা খুঁজে বেড়ানো! সেবি আমাকে কিছু দিন আগে চিঠি দিয়ে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। তার পরেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগী হই।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত সপ্তাহে একটি টিভি চ্যানেলের কর্মীরা অভিযোগ দায়ের করার পরেই তাঁরা ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির কাজকারবার সম্পর্কে জানতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কই, তার পর তো আর আমরা দেরি করিনি! সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। ওদের বোর্ড অফ ডিরেক্টরকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই সাংবাদিক বৈঠকের পরে বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, তাঁর কথায় কোনও আশার বার্তা নেই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “সর্বস্বান্ত হওয়ার পরে আমানতকারীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘যা গেছে তা গেছে।’ এর ভিতরের বার্তা হল, যেটুকু আছে, সময় দিচ্ছি, এ দিক ও দিক করে নেওয়া হোক।” রাজ্য সরকার ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলিকেই গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে ইঙ্গিত করেছেন সূর্যবাবু।
সারদা গোষ্ঠীর অফিসে হামলা ও এজেন্টদের অবস্থান-বিক্ষোভ কিন্তু অব্যাহত। জেলা থেকে আসা এজেন্টরা দুপুরে দীর্ঘক্ষণ মেয়ো রোড অবরোধ করে রাখেন। গাঁধী মূর্তির তলায় সমাবেশ করে এজেন্টরা দাবি করেন, অবিলম্বে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্য সরকারকে এজেন্টদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে।
বারাসতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের অফিস এবং জেলায় সারদার প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। রানাঘাটে এজেন্টদের মিছিল হয়। মিছিলে কয়েক জন আমানতকারীও সামিল হয়েছিলেন। শিলিগুড়িতে লগ্নিকারীরা ‘এজেন্ট-কর্মী সম্মিলিত সারদা ঐক্য’ নামে সংগঠন তৈরি করে আন্দোলনে নেমেছেন। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদহে এবং ধুবুরিতেও আমানতকারীরা রাস্তা অবরোধ করেন। জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ায় সারদা সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। এ সবের মধ্যেই আমানতকারীদের টাকা ফেরতের হুমকি শুনে মুর্শিদাবাদের সুতিতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন শ্রীনন্দন সিংহ। তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবীও সারদা গোষ্ঠীর ফরাক্কা অফিসের এজেন্ট।
চলছে ধরপাকড়ও। এ দিন সারদার চার এজেন্ট এবং আরামবাগ শাখা অফিসের ম্যানেজার মনির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্ধমানে এক এজেন্ট অফিস খুলতে দেখে বেতন নিতে আসেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। আরও দু’জন গ্রেফতার হন মুর্শিদাবাদের ডোমকলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.