গ্রামবাসীদের তৈরি সেতুকে বিপজ্জনক বলে প্রচার করে জেলা প্রশাসনের লোকজন ভাঙতে এলে তা নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল বসিরহাটের স্বরূপনগরে। সোমবার দুপুরে স্বরূপনগরের তরণীপুর গ্রামে ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা ফেরিঘাটের ইজারাদারের চালাঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডার ডেকে ওখানে ফেরিঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। সরকারি অনুমতি ছাড়া ওই জায়গায় ইছামতীর নদীর ওপর বাঁশের সেতু তৈরি করেছিলেন গ্রামের মানুষ, যা একেবারেই বেআইনি। গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই সেতুটি ভেঙে ফেরার জন্য বিডিও এ দিন পুলিশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় পুলিশকে ফিরে আসতে হয়। জনতা সেখানে একটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।”
মহকুনা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তরণীপুর এলাকায় ইছামতী পারাপারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঘাট ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু তার মধ্যেই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ওখানে সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে প্রচারে এসে রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেতু তাঁরা পাননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা নিজেরাই কিছুদিন আগে বাঁশের সেতু তৈরি করতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, প্রশাসন এখন বেআইনি বলছে। অথচ নেতারা যখন সেতু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তখন তাঁরা জানতেন না যে এখানে সেতু বেআইনি? সেতু বেআইনি ঘোষণা করে তা ভাঙার জন্য প্রশাসনের নির্দেশ দেওয়া নিয়ে ঘাটের ইজারাদারই দায়ী বলে তাঁদের মত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এক শ্রেণির সুবিধাবাদী অসাধু রাজনৈতিক নেতা যাতে ফেরিঘাট ইজারার টাকা পাতে পারেন সে জন্যই এখানে সেতু তৈরি করা হচ্ছে না।
এ দিন সকালে সেতু ভেঙে দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে এলাকায় প্রতার শুরু হয়। বলা হয়, ‘দুর্বল সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা সেতুটি বেঙে দেব’। দুপুর আড়াইটা নাগাদ স্বরূপনগরের বিডিও অরুণাভ পাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গিয়ে সেতু ভাঙতে গেলে গণ্ডগোল বাধে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বিডিওকে জানান, সেতু ভাঙা যাবে না। যদি সেতু ভাঙা হয় তা হলে কংক্রিটের সেতু করে দিতে হবে। বাধা পেয়ে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা ইজারাদারদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেতু আন্দোলন কমিটির সভাপতি সরবত আলি মণ্ডল বলেন, “জেনেছি, গত বছর জুলাই মাসে সেতু তৈরির জন্য সরকারি অনুমোদন মিলেছে। অথচ ফেরিঘাটের ইাজারা নিয়ে অবৈধ ব্যবসার স্বার্থে আজও সেতুর কাজ শুরু হল না। তাই বিডিও পুলিশ নিয়ে সেতু ভাঙতে এলে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। ইজারাদারদের একটি ঘরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।” |