রাজ্য জুড়ে সারদা গোষ্ঠীর নানা অফিসে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে নথিপত্র। চলছে বিক্ষোভ-অবরোধ। কিন্তু হুগলির পোলবায় সারদা গোষ্ঠীর মোটরবাইক তৈরির কারখানা টিকিয়ে রাখতে আন্দোলনে নেমেছেন সেখানকার প্রায় দেড়শো শ্রমিক। ঋণ শোধ না করায় সোমবার ওই কারখানার সম্পত্তি দখলের বিজ্ঞপ্তি দিতে এসে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরতে হল ব্যাঙ্কের কর্তাদের।
শ্রমিকদের দাবি, কারখানার সম্পত্তির দখল নেওয়া যাবে না। সারদা গোষ্ঠীর হাত থেকে কারখানা নিয়ে অন্য কোনও শিল্পসংস্থার হাতে তা তুলে দেওয়া হোক। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের পালিয়ে যাওয়া ও রাজ্য জুড়ে যে ভাবে ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ছে, তাতে পরিস্থিতি যে খারাপ হচ্ছে, তা আঁচ করে রবিবারই শ্রমিকেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান সাহায্যের আবেদন নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হলেও দাবি থেকে একচুলও তাঁরা সরছেন না। |
পোলবায় ব্যাঙ্ক কর্তাকে ঘিরে শ্রমিক বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র |
কামদেবপুরে দিল্লি রোডের ধারে আট একর জমিতে রয়েছে ‘গ্লোবাল অটোমোবাইলস লিমিটেড’ নামে ওই কারখানাটি। ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে অন্য একটি সংস্থার কাছ থেকে কারখানাটি কেনে সারদা গোষ্ঠী। প্রথমে ভাল ভাবে চললেও ক্রমেই তা রুগ্ণ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ওই কারখানার জন্য ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু তা শোধ করা হয়নি। কয়েক মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ। তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না প্রায় দেড়শো কর্মী।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার একযোগে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে সম্পত্তি দখলের একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় ওই কারখানায়। কারখানা তৈরির সময় ওই ব্যাঙ্কগুলি থেকে প্রায় ২২০ কোটি টাকা ঋণ নেয় প্রথম মালিক পক্ষ। এ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১২-র ১৯ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল, পরের ছ’মাসের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। তাই এ দিন ওই সম্পত্তির দখল নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সাতটি ব্যাঙ্ক। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি লাগানোর খবর পেয়েই শ্রমিকরা কারখানায় চলে আসেন। ব্যাঙ্ককর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় বিজ্ঞপ্তি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের বকেয়া মেটাতে হবে এবং সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দোলন পাঠক নামে এক শ্রমিক বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর চিটফান্ডের সঙ্গে আমাদের সংস্থাকেও জড়ানো হল। আমরা অথৈ জলে পড়লাম।” এ দিন দখলের বিজ্ঞপ্তি দিতে আসা ব্যাঙ্কের তরফে ঋণ আদায়কারী আধিকারিক বিপ্লব দাস বলেন, “সংস্থাটি থেকে ২৫০ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়ে গিয়েছে। তাই সম্পত্তির দখল নিতে এসেছিলাম। আজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া গেল না। পরে প্রশাসনের সাহায্যে তা দেওয়া হবে।” |