বেআইনি লটারি চালানোর অভিযোগে শেওড়াফুলির তৃণমূল নেতা তোতন ঘোষকে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্থানীয় পুজো কমিটির নাম দিয়ে শেওড়াফুলি নোনাডাঙা রক্ষী বাহিনী ক্লাবে ওই খেলা চলছিল। ক্লাবের সম্পাদক তোতনবাবু। তিনি স্থানীয় বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্যও বটে।
রবিবার রাতে তোতনবাবু ছাড়াও পার্থপ্রতিম মান্না নামে আরও এক ক্লাব সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে নগদ সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা। ধৃত নেতাকে ছাড়ানোর জন্য তৃণমূলের নানা মহল থেকে জেলা পুলিশের অফিসারদের কাছে ‘অনুরোধ’ আসতে থাকে বলে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। রাজ্য জুড়ে চিটফান্ড নিয়ে ডামাডোল চলায় পুলিশ অবশ্য ঝুঁকি নেয়নি। সোমবার ধৃতদের শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয় জালিয়াতির অভিযোগে। বিচারক ধৃতদের দু’দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই ক্লাবেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কয়েক মাস ধরে নোনাডাঙা সর্বজনীন পুজো কমিটির আয়োজনে প্রতি রবিবার ওই খেলা চলছে। কিছু দিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় পুলিশ সেখানে যায়। প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত খেলা হলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। তৃণমূল এবং জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই আসরে নামেন জেলার এক তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর হস্তক্ষেপে রমরমিয়ে চলতে থাকে বেআইনি ওই খেলা। তোতনবাবুদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের আনাগোনা রয়েছে। |
আদালতের পথে ধৃতেরা। ছবি: প্রকাশ পাল |
এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “কোনও অনৈতিক কাজ দল বরদাস্ত করবে না। দলের কেউ যদি দোষীদের হয়ে সাফাই দেয়, তা হলে দল ব্যবস্থা নেবে।”
রবিবার ছিল খেলার শেষ দিন। গাড়ি, মোটরবাইক-সহ নানা পুরস্কারও দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকজন সেখানে গিয়ে দেখেন, উদ্যোক্তারা কেউ নেই। পুরস্কারেরও আয়োজন নেই। এতে জনতা ক্ষেপে ওঠে। তোতনবাবুর বাড়ি ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। এক ক্লাব-কর্তার ছাপাখানায় হামলা চলে। পুলিশ যায়। উদ্ধার হয় বাক্স-ভর্তি টাকা। পুজো কমিটির নামে ছাপা লটারির প্রচারপত্র এবং টিকিটও উদ্ধার হয়। বিক্ষোভের মুখে তোতন মুচলেকা দিয়ে জানান, মঙ্গলবার খেলা হবে। পুরস্কারও দেওয়া হবে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশ অবশ্য নিজে থেকেই (সুয়ো মোটো) আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়। গ্রেফতার করা হয় দুই কর্মকর্তাকে।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, তোতনকে ছাড়ানোর জন্য বিধায়ক-সহ নানা স্তরের তৃণমূল নেতা তদ্বির করেন পুলিশের পদস্থ অফিসারদের কাছে। আদালত চত্ত্বরেও কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে দেখা যায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই লটারির উদ্যোক্তা হিসেবে আলমগির এবং রাকিব নামে মুর্শিদাবাদের দু’জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ওই লটারি চক্রের অন্য যে সব পাণ্ডা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে তল্লাশি চলছে।” |