সম্পাদকীয় ২...
অতিথি সত্কার
ভারতে আসিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করিতেছেন বিদেশিরা। প্রথমে কেবল পর্যটকরা এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছিলেন। গোয়া হইতে শুরু করিয়া উত্তরপ্রদেশ অবধি পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রগুলি সম্পর্কে বিদেশি পর্যটকদের সতর্ক করিতেছিল নানা দেশের সরকার। চুরি-ছিনতাই, রাহাজানি, শারীরিক নিগ্রহ এবং মহিলাদের যৌন নির্যাতনের উপর্যুপরি ঘটনাই ওই সতর্কবার্তার কারণ। এ বার লখনউয়ে অনুষ্ঠেয় একটি আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্টে যোগ দিতে আসা প্রায় সত্তর জন বিদেশি খেলোয়াড় প্রতিযোগিতা হইতে নাম তুলিয়া লইয়াছেন। কারণ লখনউ তাঁহাদের নিরাপদ মনে হইতেছে না। বর্ধমান খুন-ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনা এবং বিদেশি নাগরিকদের তাহার শিকার হওয়ার দৃষ্টান্তগুলিই এ ক্ষেত্রে তাঁহাদের সন্ত্রস্ত বোধ করার হেতু।
এই বোধ অযৌক্তিক বলিয়া অগ্রাহ্য করা কঠিন। মধ্যপ্রদেশে এক বিদেশি মহিলা পর্যটককে গণধর্ষণ, আগরায় অন্য এক বিদেশিনির উপর ভোর রাত্রে যৌন নিগ্রহের অপপ্রয়াস ইত্যাদি ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলি দেশবিদেশের গণমাধ্যমে সবিস্তার প্রচারিত হইয়াছে। ভারত যে শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের অবাধ যাতায়াতের পক্ষে নিরাপদ নয়, এমন একটি বার্তা সর্বত্র পৌঁছাইয়া গিয়াছে। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে উত্তরপ্রদেশের নিজস্ব করুণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এই রাজ্যে বাহুবলী রাজনীতিকদের মন্ত্রী হওয়ার এবং সেই মন্ত্রীর শাগরেদদের হামলায় শীর্ষস্থানীয় পুলিশ অফিসারদের নিহত হওয়ার অসামান্য রেকর্ড রহিয়াছে। উপরন্তু অপরাধীদের গ্রেফতার না-হওয়ার, বুক ফুলাইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবার, ভয় দেখাইয়া সাক্ষীসাবুদ লোপাট করিবার ঐতিহ্যও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। অখিলেশপ্রসাদ যাদবের মুখ্যমন্ত্রিত্বে সমাজবাদী পার্টির সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সেই প্রবণতা বাড়িয়াছে, এমন অভিযোগ বহুলপ্রচারিত। বিদেশি খেলোয়াড় বা তাঁহাদের স্পনসরদের পক্ষে এই পরিস্থিতি স্বস্তিকর নয়।
ইহার ফলে বহির্বিশ্বে ভারতের যে বদনাম ছড়াইতেছে, তাহার প্রধান দায় নিশ্চয় সরকারের। এ কথা সত্য যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে, এমনকী উন্নত পশ্চিমেও এমন নানা ঘটনা ঘটে, যাহা অবাঞ্ছিত। কিন্তু ওই সকল দেশে প্রশাসন সচরাচর পত্রপাঠ কড়া ব্যবস্থা লয়, দোষীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার করিয়া শাস্তি বুঝাইয়া দেয়। তাই অপরাধীদের মনেও ভয় থাকে। ভারত ও তাহার রাজ্যগুলিতে অপরাধীদের মন হইতে এই ভয়টাই উবিয়া গিয়াছে। কারণ তাহারা জানে, প্রথমত পুলিশ তাহাদের ধরিতে ঝাঁপাইবে না। দ্বিতীয়ত, রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় লইলে পুলিশের যাবতীয় তত্‌পরতা নিস্তেজ হইয়া যাইবে। ফলে দুষ্কৃতীরা মনে করে, তাহাদের কেশাগ্রও কেহ স্পর্শ করিবে না। ভারতীয় সমাজ একদা তাহার অতিথিপরায়ণতার জন্য খ্যাত ছিল। এখনও বিদেশি পর্যটকদের কাছে দেশকে আকর্ষণীয় করিয়া তুলিতে সরকারি প্রচারে ‘অতিথি দেবো ভব’ ইত্যাদি সংস্কৃত বাণী উদ্ধৃত থাকে। বাস্তব বিপরীত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.