|
|
|
|
রাজার চিঠি নয়া অস্ত্র বিরোধীদের |
টু-জি-কয়লা অস্বস্তি বাড়াচ্ছে কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আশঙ্কাটা ছিলই। সংসদের প্রথম দিনেই তা সত্যি প্রমাণিত হল। বসতে না বসতেই ফের অচল হল সংসদ। এবং চলতি অধিবেশন কতটা সুষ্ঠু ভাবে চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল প্রথম দিনেই।
যোজনা কমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও বামেদের হট্টগোল তো ছিলই, তার উপর দিল্লিতে ফের গণধর্ষণ, কয়লা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের অপব্যবহার, টু-জি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) রিপোর্ট সব মিলিয়ে বিরোধীরা আজ একজোট হয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে সংসদ পুরোপুরি অচল করে রাখল। এর মধ্যেই সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুললেন প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা। জেপিসি-র চেয়ারম্যান পি সি চাকোর কাছে ১১২ পাতার এক চিঠিতে তিনি জানান, টু-জি সংক্রান্ত যাবতীয় গতিবিধি প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন। ফলে জেপিসি-র রিপোর্ট পেশের আগে তাঁর এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও লিপিবদ্ধ করা দরকার।
মনমোহন সিংহের সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে দলের সাংসদদের মধ্যে। তাঁদের অভয় দিতে আজ ময়দানে নামেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতেও স্বস্তি পেল না কংগ্রেস। সন্ধ্যা হতে না হতেই নতুন তোপ দাগলেন এ রাজা। চাকোর অপসারণের দাবিতে ডিএমকে একটি অধিকারভঙ্গের নোটিস দিয়েছে। ইউপিএ-র প্রাক্তন শরিকের অবস্থান দেখে বিজেপিও চাকোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট ফাঁসের অভিযোগ তুলে অধিকারভঙ্গের নোটিস দিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। সরকারের অস্বস্তির আরও বাড়াতে পারে কয়লা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই প্রধানকে ডেকে পাঠানোর ঘটনা। সুপ্রিম কোর্টের হলফনামায় সিবিআই জানাতে পারে, আইনমন্ত্রীর নির্দেশে আইন মন্ত্রক তাদের রিপোর্ট দেখেছে।
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “আমাদের কাছে এখন মূল বিষয় হল টু-জি নিয়ে জেপিসি-র রিপোর্ট। কোনও নিয়মের পরোয়া না করে রীতিমতো গায়ের জোরে মনমোহন সিংহ ও চিদম্বরমকে আড়াল করার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে! যতক্ষণ না সরকার সেই অবস্থান থেকে পিছু হঠছে, ততক্ষণ সরকারের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করা হবে না।”
আজই সংসদ শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চলবে। সরকার বিরোধীদের যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনায় রাজি। পাশাপাশি অনেক গুরুত্ব বিল পাশের ব্যাপারে বিরোধীরা যেন সরকারকে সাহায্য করে। কিন্তু বিজেপির স্পষ্ট জবাব, সরকার যখন অযথা বাজপেয়ীকে টেনে এনেছে, তখন কোনও বিষয়েই তারা সরকারকে সহযোগিতা করবে না। ফলে বিলগুলির ভবিষ্যৎও এখন অন্ধকারে। যদিও লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের ইঙ্গিত, খুব বেশি হলে অর্থ বিলগুলি পাশ করাতে সাহায্য করতে পারে বিজেপি। এই অবস্থায় জেপিসি-র চেয়ারম্যান চাকো-র দাবি, তাঁদের তরফে জেপিসি-র রিপোর্ট ফাঁস হয়নি। আর রিপোর্টে বাজপেয়ীর নামও করা হয়নি। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে কই? সরকার তথা কংগ্রেসের অস্বস্তি বহুগুণ বাড়িয়েছে রাজার চিঠি। আজ চিঠিতে প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী লিখেছেন, “২০০৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনেক বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কখনও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ফাঁকে। কখনও পৃথক ভাবে তাঁর দফতর বা বাড়িতে। ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সাতটি চিঠিও লিখেছি প্রধানমন্ত্রীকে। সব সিদ্ধান্ত ও গতিবিধি তাঁকে জানানো হয়েছে। সব চিঠি ব্যক্তিগত ভাবে প্রাপ্তি স্বীকারও করেছেন তিনি।” রাজার বক্তব্য, “সিবিআই এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে জেরাই করেনি। তা হলে কীসের ভিত্তিতে তারা রিপোর্ট দিতে পারে, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বিভ্রান্ত করেছি? ” রাজার দাবি, “আমি যদি প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্তই করতাম, তা হলে ফের আমাকে টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হত না!”
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অঙ্ক, ডিএমকে সমর্থন তুলে নেওয়ার পর জেপিসিতে এখন সংখ্যালঘু সরকার। ফলে আগামী বৃহস্পতিবার জেপিসি-র চূড়ান্ত বৈঠকে সব বিরোধী দল এক হলে ওই রিপোর্ট খারিজ হয়ে যাবে। আর তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজার নতুন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে আরও কোণঠাসা করা সম্ভব হবে। তত দিন সংসদে কয়লা কেলেঙ্কারি-সহ অন্য বিষয়ে সরকারের বিড়ম্বনা আরও বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হবে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি আজ বলেন, “আইনমন্ত্রীকে সংসদে সাফাই দিতে হবে, সিবিআই প্রধানকে ডেকে তিনি আসলে কী করেছিলেন।” |
|
|
|
|
|