|
|
|
|
পদত্যাগের দাবি খারিজ সিপির |
ক্ষোভ সামলাতে ফের বন্ধ দিল্লি মেট্রো |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
গুড়িয়া কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে চার দিন হয়ে গেল। উত্তপ্ত রাজধানীতে বিক্ষোভ কমার কোনও লক্ষণ নেই। বিক্ষোভের তৃতীয় দিনেও দিল্লি পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারের পদত্যাগ দাবি করে দিল্লি পুলিশের সদর দফতর ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা। সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ হয়। নির্ভয়া কাণ্ডের পর ফের আর এক বার বিক্ষোভের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয় তিনটি মেট্রো স্টেশন রেসকোর্স রোড, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়ট এবং উদ্যোগ ভবন।
তাঁর পদত্যাগ নিয়ে যে জোরালো দাবি উঠেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে নীরজ জানান, দিল্লি পুলিশ প্রধান হিসেবে তিনি গর্বিত। বরং সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন নীরজ। বলেন, “সাংবাদিক যদি কিছু ভুল লেখেন তার দায় নিয়ে কি সম্পাদক ইস্তফা দেবেন?” দিল্লি পুলিশ কোনও ভুল কাজ করেনি বলেও প্রথমে দাবি করেন তিনি। পরে অবশ্য কিছুটা সুর নরম করে নীরজ স্বীকার করে নেন যে, পুলিশদের কর্তব্যে কিছুটা হলেও গাফিলতি রয়েছে। তবে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গুড়িয়ার বাবা-মাকে যে দুই পুলিশকর্মী ২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ তাদের এখনও খোঁজ মেলেনি বলে জানান নীরজ। বলেন, “গুড়িয়ার বাবা মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাঁর পক্ষে থানায় আসা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দোষী পুলিশকর্মীদের শনাক্তকরণ করা যায়নি।” |
|
সংসদ ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই |
এ দিকে পাঁচ বছরের গুড়িয়াকে ধর্ষণ ও অত্যাচারের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্র। লোকসভায় সোমবার এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। তিনি জানান, যে থানায় গুড়িয়ার বাবা অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন সেই থানার স্টেশন হাউস অফিসার ও ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গাফিলতির তদন্ত করছেন যুগ্ম কমিশনার (ভিজিল্যান্স)। অন্য দিকে গুড়িয়া কাণ্ডের প্রতিবাদ দেখানোর সময়ে এক মহিলা বিক্ষোভকারীকে চড় মারার ঘটনায় এসিপি বি এস অহলওয়াতকে সাসপেন্ড করা হয়।
আজ সকালে এইমসের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ডি কে শর্মা জানান, গুড়িয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। আজ তরল এবং গলা খাবার খেয়েছে সে। তবে ক্ষত শুকিয়ে গেলে তবেই গুড়িয়া উঠে বসতে বা হাঁটতে পারবে। অ্যান্টিবায়োটিক কাজে লেগেছে। তার জ্বর কমে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন শর্মা। তবে এই মুহূর্তে গুড়িয়ার কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন শর্মা। কারণ শর্মার মতে, গুড়িয়া খুবই ছোট। তাই তার সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে তা বোঝার ক্ষমতা এখনও হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল গুড়িয়াকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে তার কাউন্সেলিং করানো হতে পারে বলেও জানান তিনি। গুড়িয়া কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন সনিয়া গাঁধী একটি বৈঠক ডেকেছেন।
বিক্ষোভের আশঙ্কা করে সোমবার সকাল থেকেই দিল্লির রাস্তায় কড়া পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। রেড ক্রস রোড, রফি মার্গ, রাইসিনা রোড এবং রাজপথের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি। সকালের দিকে যন্তরমন্তরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-সহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পরে তাঁরা মার্চ করে সংসদের সামনে যান। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের আটকে দেন। সংসদ ভবনের পণ্ডিত পন্থ মার্গের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। কিন্তু বিজেপির দিল্লি শাখার প্রধান বিজয় গয়ালের নেতৃত্বে দলের এক দল সমর্থক উল্টো দিক দিয়ে সংসদ ভবনের ১ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছে যান। সেখানে তাঁরা দিল্লির পুলিশ কমিশনার ও মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পদত্যাগ দাবি করেন। গুড়িয়া, নির্ভয়া-সহ সারা দেশে একের পর এক মেয়েদের উপর ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি করেন গয়াল। তিনি জানান, কেন্দ্রে তাঁদের দল ক্ষমতায় এলে দেশের সব মহিলা এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর মেয়েকেও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
রাজ্যসভাতেও সোমবার গুড়িয়া কাণ্ড নিয়ে হইচই হয়। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন বসপা নেত্রী মায়াবতী, বিজেপি-র মায়া সিংহ, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি-সহ অনেক সাংসদ। তাঁদের দাবি, প্রয়োজনে এ জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া ধর্ষণ-বিরোধী আইনও ফের বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত সোমবার কেন্দ্রের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে শিন্দের বক্তব্যের অংশটিতে দেখা যায়, দিল্লিকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দিল্লি নিয়ে হইচই করার কারণ নেই, দেশের অন্যান্য অংশেও অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিরোধীরা নতুন করে হইচই শুরু করে দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|
|