|
|
|
|
ঋতব্রতর দ্রুত জামিনে আঁতাঁত দেখছে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের চাপে অবশেষে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঋতব্রত ও সিপিএমের অন্যান্য নেতানেত্রী জামিনে মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের অভিযোগ, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের যোগসাজশ রয়েছে। আর সেই কারণেই ঋতব্রতদের বিরুদ্ধে দুর্বল মামলা সাজিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
যোজনা কমিশনের সামনে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে হেনস্থার ঘটনায় আজ সকালে এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত-সহ ছ’জন বাম নেতানেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুরে পাতিয়ালা হাউস আদালতে পেশ করে তাঁদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের আর্জি জানায় পুলিশ। যে ৫টি ধারায় ঋতব্রতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে সরকারি পদস্থ ব্যক্তিদের কাজের সময় শারীরিক নিগ্রহ বা আঘাত করার মতো জামিন-অযোগ্য ধারাও রয়েছে। কিন্তু ৯ এপ্রিল বিক্ষোভকারীদের হামলায় কারও আহত হওয়া সংক্রান্ত কোনও ডাক্তারি সার্টিফিকেট পুলিশ জমা দেয়নি। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আকাশ জৈন এই যুক্তিতেই ৫ হাজার টাকার বন্ডে সকলকে নিঃশর্ত জামিন দিয়ে দেন।
যোজনা কমিশনের সামনে হেনস্থা হওয়ার পর কমিশনে বৈঠক সেরে দিল্লিতেই এইম্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। পুলিশের বক্তব্য, তিনি যে আহত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছেন, এইম্স এমন কিছু জানায়নি। |
|
ছবি: পিটিআই |
ঠিক এইখানেই বাম-কংগ্রেস যোগসাজশের গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। লোকসভায় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে যে সিপিএমের যোগসাজশ রয়েছে, সেটা তো আমরা জানি। তাই এমন আলগা ভাবে মামলা সাজানো হয়েছে যাতে দোষীরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের চাপেই এই গ্রেফতার হল।” অভিযোগ খণ্ডন করে সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, “আমরা ওই ঘটনার নিন্দা করেছি। কিন্তু পুলিশ কাউকে শারীরিক নিগ্রহ করার প্রমাণ পায়নি বলেই সকলে নিঃশর্ত জামিন পেয়েছেন।” ঋতব্রত নিজেও জামিন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অমিত মিত্রকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, “মিথ্যে অভিযোগ ও মামলা এক জন কমিউনিস্টের কাজের স্বীকৃতি। তবে আমি আগেও বলেছি, নিগ্রহে জড়িত না থাকলেও ওই বিক্ষোভে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে অনভিপ্রেত যে ঘটনা ঘটেছে, তার দায়ও আমি এড়াতে পারি না। তার জন্য আগেই দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছি।” তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে নীলোৎপলের প্রশ্ন, “যোজনা কমিশনের ঘটনায় পরের ৪৮ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গে যে বাম নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে, তার দায়িত্ব কে নেবে?”
যোজনা কমিশনের সামনে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের হেনস্থার ঘটনায় ঋতব্রতর বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এত দিনেও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককের চাপ দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্য পুলিশের ডিজি একাধিক বার দিল্লি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে কলকাতায় গেলে তাঁর কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। রাজনৈতিক চাপও তৈরি করা হচ্ছিল তৃণমূলের তরফে। কলকাতায় দলের সমাবেশে কাল সুদীপবাবু হুমকি দেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে সংসদ অচল করা হবে। সংসদের বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভের পর দুই কক্ষেই এ নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। আজও এ বিষয়ে শিন্দের সঙ্গে কথা বলেন সুদীপ।
এ দিনের গ্রেফতার পর্ব সেই রাজনৈতিক চাপের মুখেই। মোবাইলে লাগাতার হুমকি আসা নিয়ে পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানার সঙ্গে ঋতব্রত এমনিতেই যোগাযোগ রাখছিলেন। তাঁকে ও দিল্লি রাজ্য কমিটির সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়াল, এসএফআই-নেতা সুনন্দ সিংহ, দিল্লি পার্টির সদস্য আশা শর্মা, অঞ্জু ঝা, নাথু প্রসাদকে ওই থানায় ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই ছ’জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির যে সব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েচে সেগুলি হল, ১৪৭ (দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধানো), ১৪৮ (অস্ত্র-সহ হাঙ্গামা বাঁধানো), ১৮৬ (সরকারি ব্যক্তিদের কাজে বাধা), ৩৩২ (কাজের সময় সরকারি ব্যক্তিদের আঘাত করা) ও ৩৫৩ (সরকারি ব্যক্তিদের উপর কাজের সময় শারীরিক হামলা)। শেষেরটি জামিন-অযোগ্য অপরাধ। ঋতব্রতরা নিঃশর্ত জামিন পাওয়ায় এ বার দিল্লির বাইরেও যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী সোমদত্ত শর্মা সে দিনের ঘটনা নিয়ে সিপিএমের দলীয় তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। এসএফআইয়ের প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ হলেও সে দিনের কর্মসূচি আয়োজন করেছিল দিল্লি রাজ্য কমিটি। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তাই অভিযোগের আঙুল তোলে দিল্লি কমিটির সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়ালের দিকেই। অভিযোগ ছিল, তিনি এসএফআই-এর তরুণ নেতাদের উপর নিজের দায় চাপিয়ে দিতে চাইছেন। অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার অভিযোগও রয়েছে পুষ্পেন্দ্রর বিরুদ্ধে। প্রকাশ কারাট কেন এই রকম বিক্ষোভের অনুমতি দিলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা। পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় দিল্লি কমিটির কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
বিমানবাবু এ দিন পরে বিধাননগরে বলেন, “অর্থমন্ত্রীকে লাঞ্ছনা করার ঘটনা কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মানতে পারে না। আমরাও মানতে পারিনি। আমরা নিন্দা করেছি। এখনও করছি।” তবে তৃণমূলের অভিযোগকে কটাক্ষ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “প্রথম বার বলা হল অমিত মিত্রের লেগেছে। তার পর দেখা গেল, শুধু তাঁকে দিয়ে বেশি কিছু করা যাবে না। দ্বিতীয় ভাষ্যে বলা হল, মুখ্যমন্ত্রী মার খেয়েছেন! মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত লাগেনি।” তাঁর সংযোজন, “ফোনের বিজ্ঞাপনে থাকে হোয়্যারএভার ইউ গো, নেটওয়ার্ক ফলোজ। ওই বিজ্ঞাপনের মতো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লেপ্টে ছিলেন দু’জন। বলা হল, রড দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে। যদি পুরমন্ত্রী না আটকাতেন, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী মারা যেতেন! এমনও গল্প হয়েছে!” |
|
|
|
|
|