যাদবপুর ক্যাম্পাসে নেশায়
আপত্তি, উত্তেজনা

ক্যাম্পাসের ভিতরেই কয়েক জন ছেলেমেয়েকে নেশা করতে দেখে বাধা দিয়েছিলেন হস্টেলের আবাসিক একদল ছাত্র। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দলের মধ্যে গোলমালের অভিযোগ উঠল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নেশা করার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে, তাঁদের একাংশ যাদবপুরের পড়ুয়া। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে। এর সূত্র ধরে সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাসে ফের এক দফা উত্তেজনা তৈরি হয়। যার জেরে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সান্ধ্য ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের গোলমাল ঠেকাতে কঠোর আচরণবিধি তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন যাদবপুরের রেজিস্ট্রার। যদিও তা কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ চার নম্বর গেটের কাছে একদল ছেলেমেয়েকে নেশা করতে দেখেন হস্টেলের আবাসিক কয়েক জন ছাত্র। তাঁদের এক জনের কথায়, “ওই ছেলেমেয়েরা যাতে ক্যাম্পাসের ভিতরে নেশা করতে না পারে, তা দেখতে নিরাপত্তারক্ষীদের অনুরোধ করি। ওঁরা বলেন, কিছু করা যাবে না। তখন দলটিকে জিজ্ঞাসা করি, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কি না। তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাই। কিন্তু ওরা তা দেখাতে পারেনি বলে ওদের ক্যাম্পাসে আটকে রাখা হয়।” খবর পেয়ে রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ গিয়ে আটক দলটিকে উদ্ধার করে।
যদিও আটকে পড়া দলের সদস্যেরা অন্য কথা বলছেন। এই দলের তিন তরুণী জানান, তাঁদের এক জন এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করছেন, এক জন সেখানেই ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পড়ছেন, অন্য জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। এম ফিল পাঠরত ছাত্রীর কথায়, “গবেষণার কাজে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। হঠাত্‌ দেখি, একদল ছেলে ক্যাম্পাসের ভিতরে বহিরাগতদের অভব্য আচরণের বিরোধিতা করতে চলেছে। আমরাও তাদের সঙ্গে যাই। কিন্তু ওরা বহিরাগত এক জনকে মারতে উদ্যত হলে আমরা বাধা দিই। এর পরে ছেলেদের দলটি আমাদের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলে গোলমাল শুরু করে, আটকে রাখে। আমাদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এই ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানে মেয়েদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেলে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে তদন্তের জন্য।
ওই ছাত্রীর দাবি, তাঁরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ জানাতে গেলে যাদবপুর থানার পুলিশ তাঁদের হেনস্থা করেছে বলেও অভিযোগ ওই ছাত্রীর। যদিও পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রীদের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাঁরা মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
সোমবার এই ছাত্রীরা আবাসিক এক ছাত্রের ছবি তুলতে যান এবং তাঁকে মারধর করেন বলে পাল্টা অভিযোগ ওঠে। যদিও ছাত্রীরা তা অস্বীকার করে আবাসিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে তাঁদের ফের আক্রমণের অভিযোগ জানান। এর জেরে ক্যাম্পাসে সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনের সামনে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে যান রেজিস্ট্রার, ডিন অফ স্টুডেন্টস-সহ আধিকারিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
পরে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “আপাতত দু’দিন সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনের সামনের জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা বসতে পারবে না। এর মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক সকলের সঙ্গে কথা বলে আদর্শ আচরণবিধি তৈরি করা হবে।” তিনি জানান, রবিবারের ঘটনার কথা জানিয়ে আবাসিক ছাত্রেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেখানে কয়েক জনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এই অভিযোগকে কর্তৃপক্ষ সমর্থন করেছেন বলে প্রদীপবাবু জানান। পাশাপাশি, ওই ছাত্রীরা যাদবপুরের পড়ুয়া কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
রেজিস্ট্রার বলেন, “আমাদের একটি আচরণবিধি রয়েছে। তাতে ক্যাম্পাসে নেশা না করা, বহিরাগতদের কারণ দর্শিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকা ইত্যাদি নিয়ম আছে। ফের একটি আচরণবিধি তৈরি করে তা কঠোর ভাবে মানার চেষ্টা হচ্ছে।” বছর দুই আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের গোলমালের পরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ঢোকা-বেরোনোর বিভিন্ন নিয়ম কঠোর ভাবে কার্যকর করা হয়। বেশি দিন তা টেকেনি। নয়া আচরণবিধি তৈরি হলেও তা যে কার্যকর হবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.