তদন্ত কমিটির প্রধান এক জন শিক্ষাবিদ, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালেও তাঁর তলবকে পুলিশ আমলই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এই অবস্থায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সোমবার নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা নিয়ে তাদের গড়া বিশেষ তদন্ত কমিটি কলকাতার পুলিশের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে কমিশনের পুলিশ সুপারই নোটিস পাঠিয়ে তাঁকে ডাকবেন। কমিশনের এসপি-ও ওই বিশেষ তদন্ত কমিটির এক জন সদস্য বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
কমিশন সূত্রের খবর, বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় গত ১৯ এপ্রিল জোড়াসাঁকো থানার পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে পাঠালেও পুলিশ যায়নি। অনুসন্ধানের স্বার্থেই জোড়াসাঁকো থানার ওসি এবং আরও তিন জন পুলিশকর্মীকে অমলবাবুর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন ছিল। কমিটি জেনেছে, ওই তিন পুলিশকর্মী ১০ এপ্রিল, হাঙ্গামার দিন প্রেসিডেন্সিতে মোতায়েন থাকলেও তাঁরা হামলা ঠেকাতে কোনও ব্যবস্থা নেননি। এমনকী রেজিস্ট্রার তাঁদের সাহায্য চাইলেও তাঁরা নাকি জানিয়ে দেন, ‘নিদের্শ নেই।’ থানার ওসি-কে
ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন রেজিস্ট্রার। কিন্তু তিনিও সাড়া দেননি বলে অভিযোগ। এ-সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ১৯ তারিখে অমলবাবু জোড়াসাঁকো থানার ওসি-কে ফোন করে প্রেসিডেন্সিতে যেতে বলেন।
কিন্তু পুলিশের কেউ যাননি। জোড়াসাঁকো থানার তরফে কোনও সাড়া না-পেয়ে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন করায় তিনি অমলবাবুকে জানান, এই ব্যাপারে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ ছাড়া তাঁদের কিছু করা সম্ভব নয়। অমলবাবু তখন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তাকে ফোন করেন। তাঁকে উল্টে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন অধিকারবলে তিনি পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাচ্ছেন?
প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ গোটা বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানান।
তার পরেই কমিশন এ দিন নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রেসিডেন্সিতে হামলার ঘটনায় আমাদের গড়া তদন্ত কমিটির প্রধান অমল মুখোপাধ্যায় পুলিশকে ডেকে পাঠালেও পুলিশ আসতে চাইছে না। সেই জন্যই আমরা নতুন একটি নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, কমিশনের এসপি আন্নাপ্পা ই ওই কমিটির সদস্য এবং তিনিই প্রয়োজন অনুযায়ী পুলিশকে ডেকে পাঠাবেন। আশা করি, এর পরে আর অসুবিধে হবে না।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই নিয়ে অনর্থক জটিলতা তৈরি হয়েছিল। আসলে এটা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান অমল মুখোপাধ্যায়।
তবে কমিশন সূত্রের খবর, গত ১১ এপ্রিল এই বিষয়ে কমিশনের প্রথম নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, কমিশনের এসপি ওই তদন্তের ব্যাপারে অমলবাবুর সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করবেন। কিন্তু এসপি ওই তদন্ত কমিটির সদস্য কি না, সেটা স্পষ্ট করে বলা ছিল না।
এর পরে কমিশনের তদন্ত কমিটি ডাকলে পুলিশ যাবে কি?
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “কোনও তদন্ত কমিশন বা তদন্ত কমিটি পুলিশের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে লিখিত ভাবে জানাতে হয়। ফোন করে ডাকাটা দস্তুর নয়। প্রেসিডেন্সির জন্য গড়া কমিটি নিয়ম মেনে ডাকলে তখন দেখা যাবে।” |