সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবির ধাক্কা আর শুধু একটি সংস্থার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং অন্য নানা ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থায় করা লগ্নি নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন রাজ্যবাসী। টাকা ফেরত চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন লগ্নিকারীরা।
সোমবার সবচেয়ে বড় গণ্ডগোল হয় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে ‘রোজভ্যালী’ সংস্থার শাখা অফিসে। বিকেল ৫টা নাগাদ বেশ কিছু লোকজন মানিকতলা এলাকায় একটি বাড়ির তিনতলায় ওই অফিসে ঢুকে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। নথিপত্র ছিঁড়ে দেয়। তুলে নিয়ে যায় একাধিক কম্পিউটার। শাখা ম্যানেজার গোকুল বেরা বলেন, “এ দিন অফিস বন্ধের কিছু পরে অনেক লোক জোর করে ঢুকে পড়ে। তারা গ্রাহক কি না জানতে চাইলে কর্মীদের হুমকি দেয়। গালিগালাজ করতে-করতে আসবাব ভাঙচুর করে।” সন্ধ্যায় রোজভ্যালীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবময় দত্ত বলেন, “সন্ধ্যার মুখে তমলুক শাখায় ৫০-৬০ জন বহিরাগত, তারা আমানতকারী নয়, আচমকা ঢুকে কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। কর্মীদের মারধর করে, তাঁদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, কিছু কম্পিউটার তুলে নিয়ে যায়। আমাদের অনুমান, আমাদের সংস্থাকে চাপে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।” দুপুরে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি এবং বর্ধমানের রানিগঞ্জে রোজভ্যালীর শাখা অফিসে গিয়ে টাকা ফেরত চান কয়েকশো আমানতকারী। শিবময়বাবুর বক্তব্য, “অনেক আমানতকারী টাকা ফেরত চেয়েছেন। তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। নগদে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। চেক দেওয়া হবে।” |
হতাশা। সোমবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে এক আমানতকারী। —নিজস্ব চিত্র |
তমলুকে যে বাড়িতে রোজভ্যালীর অফিস, সেখানেই অন্য একটি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসেও এ দিন চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। তবে নিরাপত্তারক্ষী দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় কেউ ভিতরে ঢুকতে পারেনি। উত্তেজিত লোকজন কয়েকশো মিটার দূরে আর একটি ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালায়। আসানসোলেও ওই সংস্থার অফিসে গ্রাহকের টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়। তমলুক শহরের শঙ্করআড়া এলাকায় দু’টি আর্থিক সংস্থার অফিসে ভাঙচুর হয়। হলদিয়ার দুর্গাচকে একটি লগ্নি সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নানা প্রকল্পে গচ্ছিত টাকা ফেরতের দাবি জানান কিছু গ্রাহক। আধিকারিকেরা তাতে রাজি না হলে ভাঙচুর করা হয়। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরে সংস্থার এক শাখা ম্যানেজার পূর্ণেন্দু দত্তকে গ্রেফতার করা হয়।
ডুয়ার্সে একটি ভুইঁফোঁড় লগ্নি সংস্থার সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল। এ দিনই মালবাজারে ওই সংস্থার অফিস ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। সংস্থা সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, তাদের নাম ভাঁড়িয়ে কিছু লোকজন ওই অফিস খুলেছিলেন। ময়নাগুড়ি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি শশাঙ্ক রায় বাসুনিয়া ওই সংস্থায় যুক্ত বলে অভিযোগ ওঠায় খোঁজখবর শুরু হয়েছে। শিলিগুড়িতেও একটি সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। দু’টি সংস্থার অফিসে বিক্ষোভ হয়েছে। কোচবিহার ও মাথাভাঙাতেও একাধিক সংস্থার অফিসে বিক্ষোভ দেখান লগ্নিকারীরা। একটি লগ্নি সংস্থা মালদহে অফিস বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্য একটি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। |