অভাব আইনি ক্ষমতারও
লগ্নির টাকা ফেরত পাননি, আর্তিই সার প্রতারিতদের
দন্ত হয়েছে। ধরাও পড়েছে কেউ কেউ। কিন্তু ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে প্রতারিত অনেকে এখনও টাকা ফেরত পাননি। গত তিন বছরে এ রাজ্যে গোটা তিরিশেক ওই ধরনের সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে। প্রতারিত হয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। তাঁদের এখন আর্তিই সার।
পুলিশের দাবি, ওই ৩০টি ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থা বন্ধ হওয়ার মধ্যে ৭টিতে ১০ মালিক গ্রেফতার হয়েছেন। কয়েকটির মালিক পলাতক। কোনও মালিক জামিন পেয়ে বাড়ির চার দিকে জেলখানার মতো প্রাচীর দিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন নিজেকে।
উত্তর ২৪ পরগনার এসপি সুগত সেনের কথায়, “প্রতারিত হওয়ার পরেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে চান না সাধারণ মানুষ। অভিযোগের অভাবে আইনত ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হয়।” তবে সারদা কেলেঙ্কারির পরে সুগতবাবুর দাবি, “এখন অনেকেই অভিযোগ জানাচ্ছেন। পুলিশও চেষ্টা করছে ব্যবস্থা নেওয়ার।”
কিন্তু পুলিশের হাতে মালিক ধরা পড়ার পরে জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেলেও টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকেরা। জনরোষ শুধু আছড়ে পড়েছে হাতের নাগালে পাওয়া এজেন্টদের উপরেই।
যেমন ভুগছেন বাগদার বাঁশঘাটার বাসিন্দা শিবশঙ্কর মণ্ডল। ‘রেনেসাঁস’ এবং ‘ইনফিনিটি রিয়েল-এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে দু’টি সংস্থাতেই এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন শিববাবু। দু’টি সংস্থাতেই তিনি নিজেও টাকা জমা রাখেন, গ্রাহকদের কাছ থেকেও টাকা তোলেন। বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দু’টি সংস্থাই। জমি-বাড়ি বেচে, দিনমজুরি করে এখন আমানতকারীদের টাকা মেটাচ্ছেন শিববাবু। তাঁর কথায়, “এ ভাবে টাকা গেলে কী হয়, জানি। যাঁদের থেকে টাকা নিয়েছিলাম, তাঁদের বিশ্বাসের মান রাখার চেষ্টা করছি।”
২০১০-এর এপ্রিলে বাগদার মেহেরানি-সলকপুরে ‘রেনেসাঁস’ নামে ওই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা উঠে যাওয়ার পরে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে সংস্থার দুই কর্তা মন্মথ বিশ্বাস ও প্রশান্ত বিশ্বাসকে ধরে। বাগদার বৃন্দাবন মণ্ডল, আব্দুল হামিদ, মাসুদ মোল্লারা টাকা রেখেছিলেন ওই সংস্থায়। কিন্তু এখনও তাঁরা টাকা ফেরত পাননি। বাগদারই আষাঢ়ুতে একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে ধরা পড়েন তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান তুষার বিশ্বাস। ‘লেপার্ড’ নামে ওই সংস্থার প্রাক্তন লগ্নিকারীদের অনেকে এখনও গচ্ছিত টাকার ছিটেফোঁটাও ফেরত পাননি।
কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হন বনগাঁর হেলেঞ্চা এলাকার ‘ড্রিম রোজ’ নামে একটি ভুুঁইফোঁড় সংস্থার কর্তা হারাধন বিশ্বাস। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। ওই সংস্থায় টাকা রেখে ‘প্রতারিত’ বিভাস বিশ্বাসের অভিজ্ঞতা, “নদিয়ার বগুলায় বাড়ির চারদিকে জেলখানার মতো উঁচু পাচিল তুলেছেন হারধনবাবু। টাকার খোঁজে সেখানে গিয়ে অনেক হাঁটাহাঁটি করেও ভিতরে ঢুকতে পারিনি। আমার মতো অনেকে আছেন।”
বছর খানেক আগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম করে হাবরায় ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। এজেন্টদের অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থার দুই কর্তালিপিকা শিকদার ও সুকুমার মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। তবে টাকা পাননি বিনিয়োগকারীরা। হেলেঞ্চার ‘জনকল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংস্থা উঠে যাওয়ার পরে তদন্ত করতে যাওয়া রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমানতকারীরা টাকা পাবেন কী ভাবে? সংস্থার মালিকেরা টাকা অন্য ব্যবসায় বেনামে লগ্নি করেছে। সংস্থার নামে যেটুকু সম্পত্তি ছিল, তা-ও মালিকের নামে নয়।”
এ রকমই এক ‘প্রতারিত’ বনগাঁ জয়পুরের বাসিন্দা দুলাল বিশ্বাস বলেন, “ঠকেছি। তাই পুলিশকে জানিয়েছি। প্রতারকও সাজা পেয়েছে। টাকাটা পাইনি। কী আর করব!” আর এক ‘প্রতারিত’ হেলেঞ্চার শুক্লা বিশ্বাসের মন্তব্য, “প্রতারক সংস্থার মালিককে পুলিশ ধরলে গায়ের ঝাল মেটে। তবে টাকার আশা চলে যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.