|
|
|
|
ইডেন ফেরত লঞ্চ-দুর্ঘটনা |
খড়্গপুরে এল সুদিনের দেহ, মণীশ নিখোঁজই |
সুমন ঘোষ • খড়্গপুর |
বন্ধু ও পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে আইপিএলের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খড়্গপুর শহরের মালঞ্চের বাসিন্দা সুদিন ঘোষ হাজরা (৩৪)। কেউ ভাবেইনি শববাহী গাড়িতে বাড়ি ফিরবে তাঁর দেহ। রবিবার রাতে সুদিনের দেহ পৌঁছলেও এখনও কোনও খোঁজ নেই মণীশ মাইতির।
শনিবার নাইট রাইডার্সের খেলা ছিল ইডেনে।
সকাল সকালই বেরিয়ে পড়েছিল পাঁচ বন্ধু। সুদিন ঘোষ হাজরা, মণীশ মাইতি, কৌশিক চক্রবর্তী, বান্টি মাইতি ও লাল্টু চক্রবর্তী সকলেই সকলেই খড়্গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকার লালবাংলোর বাসিন্দা। খেলা দেখে ফেরার সময় বাবুঘাটে লঞ্চ ধরতে গিয়ে জলে পড়ে যান সুদিন ও মণীশ। তাঁদের বাঁচাতে ঝাঁপ দেন লাল্টু। সুদিন ও আর একজনকে জল থেকে টেনে তুলতে পেরেছিলেন তিনি। মণীশকেও তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। |
|
|
মণীশ মাইতি। |
সুদিন ঘোষ হাজরা। |
|
ভয়ঙ্কর সেই মুহূর্তে কথা মনে পড়লেই আঁতকে উঠছেন লাল্টু। ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমোতে পারছেন না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যে বন্ধুরা গিয়েছিলেন, তাঁদের গাড়িতেই লাল্টু রাতেই বাড়ি ফেরেন। তারপর আর বাড়ি থেকে বেরোননি। বান্টির অবশ্য ফেরার কথা ছিল না। খেলা দেখে খড়দহে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো তিনি সেখানে চলে যান। বান্টির কথায়, “এক সঙ্গে পাঁচ জন খেলা দেখলাম। বেরোনোর পর শ্বশুরবাড়ি যাব বলতেই সুদিন বলল, কিছু খরচ কর। অন্তত পাঁচশো টাকা দে। ভীষণ মজার ছেলে ছিল। এখন সব শেষ।” কৌশিক চক্রবর্তী অবশ্য কলকাতাতেই থেকে গিয়েছিলেন বন্ধুর মৃতদেহের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “বাবুঘাট তখন ভিড়ে ঠাসা। পিছন থেকে জোর ঠেলাঠেলি। সকলেই লঞ্চে উঠতে চান। হঠাৎ জেটি থেকে কিছুটা এগিয়ে গেল লঞ্চটা। কয়েকজন জলে পড়ে গেল। আমিও পড়ে যাচ্ছিলাম, লাল্টু আমাকে ধরে ফেলে। তারপরই লাল্টু নদীতে ঝাঁপ মারে। ২-৩ জনকে তুলেওছিল।”
স্থানীয় কেবল ব্যবসায়ী মণীশবাবু বিবাহিত। তাঁর একটি তিন বছরের মেয়েও রয়েছে। স্ত্রী ছাড়াও বাড়িতে আছেন দাদা-বৌদি। সকলেই চূড়ান্ত উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ছেলেকে হারিয়ে বাগরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন সুদিনের বাবা মা দিলীপবাবু ও মিনতিদেবী। সুদিনরা তিন ভাই। দু’ভাই বাইরে থাকেন। ঠিকাদারির কাজ করতেন সুদিন। ক’দিন আগেই একটা সুন্দর বিছানার চাদর কিনে বিছানায় পেতে বাবা-মাকে বলেছিলেন, ‘তোমাদের দিলাম।’ সারাদিন বাবা-মা শুধু ওই কথাটাই বলে যাচ্ছেন। প্রতিবেশী চন্দ্রাণী ত্রিপাঠীর কথায়, “সুদিন কী ভাল ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পাড়ার কারও কিছু হলেই সকলেই বলত,আগে সুদিনকে খবর দে। তাহলেই কিছু একটা ব্যবস্থা হবে।” ষাটোর্ধ গৌরী চক্রবর্তী এসেছিলেন সুদিনের দেহ এসেছে কিনা খোঁজ নিতে। তিনিও বলেন, “আমার দাদার অসুস্থতার সময় সুদিনই সব ব্যবস্থা করে হাসপাতালে পাঠাল। ও আর নেই ভাবতে পারছি নায়।”
দু’চোখ জলে ভরে গেল বৃদ্ধার। গৌরীদেবীর মতোই গোটা মালঞ্চই এখন শোকস্তব্ধ। |
—নিজস্ব চিত্র।
|
এই সংক্রান্ত খবর: খোঁজ নেই তলিয়ে যাওয়া তরুণীর |
|
|
|
|
|