উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর দু’ মাস হতে চলল, এখনও রাজ্য সরকারের ফরেন্সিক দফতরের রিপোর্ট হাতে পেল না পুলিশ। বিধাননগর পুলিশের পদস্থ কর্তারা জানিয়েছেন, ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং কারা দোষী তা চিহ্নিত করতে পারবেন। এখনও রিপোর্ট হাতে না আসায় এখন তদন্ত সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। দেরির কারণ হিসেবে রাজ্য সরকারের ফরেন্সিক দফতরের পদস্থ অফিসারের মূলত অপ্রতুল কর্মী সংখ্যাকেই দায়ী করেছেন। ফরেন্সিক দফতরের ডিরেক্টর সুশান্তকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যতদূর জানি রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই তা পুলিশের হাতে পৌঁছে যাবে। খুব সম্ভবত ডাকে পাঠানোও হয়ে গিয়েছে।”
মার্চ মাসের তিন তারিখ ভোরে ভি আই পি রোড থেকে বাইপাসমুখী উড়ালপুলের একটি অংশ ভেঙে পড়ে উল্টোডাঙা খালে। একটি লরি উড়ালপুলের পাঁচিলে ধাক্কা মারার ফলে পুরো একটি ডেকই ভেঙে যায়। ট্রাকের ভিতর চালক-সহ তিন জন জখম হন। এর পরই ভেঙে পড়ার কারণ নিয়ে শুরু হয় তদন্ত।
ঘটনার পরের দিনই ঘটনাস্থলে আসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি দল। ঘটনার দু’দিন পরেই ফরেন্সিক দফতরের কার্যনির্বাহী অধিকর্তা অনুপমা বসুর নেতৃত্বে একটি দল পরিদর্শনে আসেন ও তাঁরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। দিন কয়েক পরে ফের ঘটনাস্থলে আসে ফরেন্সিক দফতরের ডিরেক্টর সুশান্তকুমার মুখোপাধ্যায়-সহ তিন সদস্যের একটি দল। ফের তাঁরা উড়ালপুলের ভেঙে যাওয়া ডেকের সিমেন্ট, ভাঙা বোল্ট, গার্ডার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্তের পর ওই ফরেন্সিক দল বেয়ারিং ও বোল্টের মাপের ত্রুটি পেয়েছিলেন। তবে সেই সঙ্গে সুশান্তবাবু জানান, উড়ালপুলের বেয়ারিং, বোল্ট, নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা করার পরই তাঁরা চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করবেন। সেই চূড়ান্ত রিপোর্ট দিন দশেকের মধ্যে হয়ে যাবে বলে জানান ওই উচ্চপদস্থ কর্তারা।
কিন্তু কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা অনেকদিন আগেই পূর্ত দফতরকে রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের ফরেন্সিক দফতরের রিপোর্ট এখনও পুলিশ পায়নি। লেকটাউন থানার এক পুলিশ অফিসার জানান, সেতু নকশার ত্রুটির জন্য ভেঙেছে না উপকরণের মান খারাপ হওয়ার জন্য ভেঙেছে, সেটারই বিশ্লেষণ করছে ফরেন্সিক দল। সেই রিপোর্ট অনুযায়ীই তদন্ত এগোবে। ওই অফিসারের কথায়, “নকশার ত্রুটি থাকলে যে ইঞ্জিনিয়ার এই নকশা তৈরি করেছেন ও যিনি অনুমোদন করেছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দিকে, যদি উপকরণের মান খারাপ হওয়ার জন্য সেতুর ওই অংশ ভাঙে তা হলে যে কনট্রাক্টর ওই অংশটি তৈরি করেছেন এবং যিনি ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও হাতে না পাওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।” পুলিশ জানিয়েছে, ভেঙে পড়া ডেকের বাঁকটি ছিল কাস্তের মতো। অতখানি বাঁকের জন্য গাড়ির যাতায়াতে সমস্যা হত কি না সব ব্যাপারই খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ফরেন্সিক দফতরের।
ফরেন্সিক দফতরের আধিকারিকেরা জানান, উড়ালপুলের ঘটনাটি যেহেতু বেশ বিরল, তাই ভাল করে ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া বেয়ারিং ও বোল্টের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা বারবার করা হচ্ছে। এই কাজ দ্রুত করতে যত কর্মী দরকার তত কর্মী তাঁদের নেই। যেখানে দু’জন সিনিয়র বিজ্ঞানী থাকার কথা সেখানে আছেন এক জন। তাঁকেই গোটা রাজ্যের ফরেন্সিক পরীক্ষা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও লোকসংখ্যা কম। তবে সুশান্তবাবু বলেন, “কর্মী অপ্রতুল হওয়া সত্ত্বেও যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেছি।”
|