ছৌ-শিল্পীদের মৃত্যু, শোক বিহারপুরেও
পুরুলিয়ার লটপদা আর কাঁকসার বিহারপুর যেন এক হয়ে গেল রবিবার।
পরিজনদের হারিয়ে লটপদার বাসিন্দারা কাঁদছিলেন। আর সেই শোক ছুঁয়ে গেল শনিবার ওই ছৌ শিল্পীদের শেষ অনুষ্ঠান দেখা বিহারপুরকে। এখানে অনুষ্ঠান সেরে শনিবার গভীর রাতে পুরুলিয়ায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে ছৌ-শিল্পীদের গাড়ি। মারা যান সাত শিল্পী। বাঁকুড়ার হাসপাতালে ভর্তি দলের জখম ২২ জন। খবরটা রবিবার সকালে বিশ্বাসই করতে পারেননি বিহারপুরের বাসিন্দারা।
এ দিন বার বার ঘুরে ফিরে আসে শনিবার রাতের তাঁদের বীর-নৃত্যের কথা। জীবনে প্রথম বার ছৌ দেখা বিহারপুরের বধূ মমতা কেশ বলছিলেন, “এমন নাচ জীবনে দেখিনি। কি শারীরিক কৌশল! কখন যে সময় শেষ গড়িয়ে গেল টেরই পেলাম না।” তাঁর আক্ষেপ, ওই প্রাণবন্ত মানুষগুলো এ ভাবে মারা যেতে পারে, বিশ্বাস হচ্ছে না।” সারা দিন মুষড়ে ছিলের বিহারপুরের বাসিন্দারা। যাঁর সঙ্গেই দেখা হয়, তিনিই বলেন, “আমাদের সবার খুব মন খারাপ। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ওঁদের নাচের অনেক ছবি তোলা হয়েছিল। সবাই মিলে সেগুলিই বার বার দেখছি।” শিল্পীদের মধ্যে এক কিশোরের নাচ মনে দাগ কেটেছে অনেকের। তাঁদেরই একজন প্রবীণা সন্ধ্যা রায়। তিনি বলেন, “শুনেছি যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে দু’জন কিশোর। যে কম বয়েসি ছেলেটা ভালো নাচছিল, সেই মারা গেল কি না কে জানে।”
আগের রাতের অনুষ্ঠানের ছবি মোবাইলে দেখছেন বাসিন্দারা।—নিজস্ব চিত্র।
বিহারপুরে প্রতি বছর ১ বৈশাখ থেকে শুরু হয় টানা চারদিনের সংকীর্তনের আসর। শেষ দুই-তিন দিন হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছৌ শিল্পীরা শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় বিহারপুরে আসেন। আয়োজকদের পক্ষে প্রদ্যুৎ কান্তি কেশ, কেদারনাথ রায়’রা বলেন, “ঝড়বৃষ্টিতে শুক্রবার রাতের যাত্রানুষ্ঠান ভেস্তে যায়। শনিবার দর্শকদের সেই অভাব পুষিয়ে দেওয়ার জন্য ছৌ শিল্পীদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ওঁরা দু’টো পালা করে সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিলেন।” রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ শুরু হয় প্রথম পালা, ‘গণেশ বন্দনা’। ঘন্টা দেড়েক চলে। এরপরে শুরু হয় দ্বিতীয় পালা, ‘বকাসুর বধ’। আয়োজকেরা জানান, অনুষ্ঠান শেষে খাওয়া-দাওয়ার পরে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে শিল্পীদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বেঁকে বসেন শিল্পীদের নিয়ে আসা পিকআপ ভ্যানের চালক। তিনি রাত কাটাতে না চাওয়ায় ভোরের দিকে শিল্পীরা রওনা দেন। তাঁদের আফশোস, রাতটা কাটিয়ে গেলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। শনিবার রাতে যে মঞ্চে ছৌ-নাচ মঞ্চস্থ হয়, রবিবার সেখানে কবিগান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন সকালে দুর্ঘটনার খবর আসতেই তা বাতিল করে দেন উদ্যোক্তারা।
পুরুলিয়ার এই লোকশিল্পীদের দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ২০০৫ সালের অগস্ট মাসের এক ভোরে ট্রেকার দুর্ঘটনায় রায়না থানার সহজপুরের পাঁচ আদিবাসী নাট্যশিল্পীর মৃত্যুর ঘটনা। বুদবুদের কাছে ভিড়সিন এলাকায় নাটক সেরে ফেরার পথে তাঁদের ট্রেকারের সঙ্গে লরির সংঘর্ষ হয়েছিল।

এই সংক্রান্ত খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.