পালা সেরে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ ভ্যান উল্টে মৃত্যু হল পুরুলিয়ার সাত ছৌ-শিল্পীর। জখম হলেন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রবিবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার থানার শালগাড়া মোড়ে, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর ৯ নম্বর রাজ্য সড়কে। জখমদের বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বীরেন মাহাতো (৬৫), গোপীনাথ মুদি (৪৫), তারাপদ কৈবর্ত্য (৪৫), নিরন শবর (২০), ডাক্তার মুদি (১৭), কল্যাণ পরামানিক (১৬) ও আকাশ সিং সর্দার (১৬)। পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার লটপদা গ্রামে তাঁদের বাড়ি। কল্যাণ ও আকাশ এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। গোপীনাথ ছিলেন বংশীবাদক, বাকিরা নৃত্যশিল্পী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনার শোকপ্রকাশ করে বলেন, “ছৌ-শিল্পীরা এ রাজ্যের সম্পদ। তাঁদের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। রাজ্য সরকারের তরফে মৃত শিল্পীদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।” |
দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র |
বলরামপুরের ‘লটপদা শালপলাশ ছৌ নৃত্য পার্টি’র শিল্পীরা শনিবার বর্ধমানের কাঁকসা থানার বিহারপুরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পালা করতে গিয়েছিলেন। ওই দলের অন্যতম কর্মকর্তা রিজওয়ান আনসারি বলেন, “নৃত্যশিল্পীরা ছাড়াও বাজনদার, পোশাক ও মুখোস বাঁধার কর্মী-সহ দলে ৪৫ জন ছিলেন। পিকআপ ভ্যানের ভিতরে সবার জায়গা না হওয়ায় উপরে আলাদা করে বাঁশের মাচা লাগিয়ে বাকিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।” পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিল্পী-কর্মী ও নাচের সরঞ্জামে ঠাসা পিকআপ ভ্যানটি ভোর চারটে নাগাদ উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে পাস দিতে গিয়ে বেসামাল হয়। ওই গাড়িতে থাকা ছৌ-শিল্পী লুথুর শবর, অধর মাহাতো, ছটুরাম মাহাতোরা বলেন, “ভোরে ফাঁকা রাস্তায় পিকআপ ভ্যান বেশ জোরেই ছুটছিল। একটি ট্রাককে পাস দিতে গিয়ে হঠাৎ পিকআপ ভ্যানটা বেসামাল হয়ে একটা বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মারে। তারপরেই একটা গাছে ধাক্কা মেরে পাশের নিচু জমিতে গড়িয়ে গিয়ে গাড়িটা উল্টে যায়। বাঁশের মাচায় বসে থাকা শিল্পীরাই বেশি চোট পান।” দুর্ঘটনার পরে প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা, পরে বড়জোড়া থানার পুলিশ কর্মীরা গিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। আহতদের বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সাত জনকে মৃত বলে জানানো হয়। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু জানিয়েছেন, আহত ২২ জনের মধ্যে সত্যবান সিং, চক্রধর কর্মকার ও শম্ভু সিং সর্দারের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ দিকে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই শিল্পীদের গ্রাম লটপদায় শোক নেমে আসে। গ্রামের অনেক ঘরে এ দিন উনুনে হাঁড়িও চড়েনি। বরাবাজারের বিডিও অনিমেষকান্তি মান্না ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রণব নিয়োগী গ্রামে গিয়ে মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার মর্গ থেকে দেহগুলি গ্রামে পৌঁছলে কান্নার রোল পড়ে যায়।
|