৩ ভাবনা ব্যর্থ, ভর্তুকি ভরসা পঙ্গু পরিবহণের
বাসভাড়া না-বাড়িয়ে পরিবহণ নিগমগুলোকে ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’-র পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, অথর্বপ্রায় সরকারি পরিবহণের পিছনে দিনের পর দিন ভর্তুকি গুণে যাওয়া অসম্ভব।
তার পরে একটা গোটা বছর পেরিয়ে আরও প্রায় তিন মাস অতিক্রান্ত। এখনও ভর্তুকির লাঠিতেই ভর করে খুঁড়িয়ে চলছে রুগ্ণ সরকারি পরিবহণ। এর মধ্যে সমস্যা সুরাহার পথ খুঁজতে পরিবহণমন্ত্রীর মাথার উপরে ‘পরিবহণ মন্ত্রিগোষ্ঠী’ বসানো হয়েছে। বদল হয়েছে দফতরের সচিবও। কিন্তু ভর্তুকি-নির্ভরতা কাটানোর দাওয়াই হিসাবে যে তিন দফা টোটকা বাতলেছিল সরকার, তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রাজ্য সরকারের অধীনে পাঁচটি পরিবহণ নিগম কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (সিএসটিসি), ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি), ভূতল পরিবহণ (ডব্লিুউবিএসটিসি) এবং উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (এনবিএসটিসি) ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (এসবিএসটিসি)। মোট কর্মী কুড়ি হাজারের বেশি। দেনার ভারে জর্জরিত নিগমগুলির দৈনন্দিন খরচ ও বেতন-পেনশন মেটাতে ফি বছর প্রায় ছ’শো কোটি টাকা ভর্তুকি ঢালতে হচ্ছে, যা কার্যত ভস্মে ঘি ঢালার সামিল বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। এই বিপুল বোঝা হাল্কা করতে নিগমগুলোকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে রাজ্য স্থির করেছিল:
১) স্বেচ্ছাবসরের মাধ্যমে কর্মী সঙ্কোচন করে বেতনখাতের ভর্তুকি কমানো হবে
২) বিভিন্ন নিগমের ডিপোয় পড়ে থাকা জমি বাণিজ্যিক কাজে লাগিয়ে নিজস্ব তহবিল গড়ে তোলা হবে, এবং
৩) সিএসটিসি-সিটিসি-ডব্লিুউবিএসটিসি একসঙ্গে জুড়ে তৈরি হবে নতুন একটা নিগম, যাতে রক্ষণাবেক্ষণ-সহ অযথা ব্যয়ের মেদ ঝরানো যায়।
কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে সরকারের এখন এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসার জোগাড়! কী রকম?
পরিবহণ-সূত্রের খবর: স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আবেদনের জন্য কর্তৃপক্ষের জারি করা নোটিসে সাড়া দিয়েছেন মোটামুটি ৫% কর্মী! এতে কর্তাদের চোখ কপালে উঠেছে। তাঁরা ভাবছেন, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে স্বেচ্ছাবসরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় কি না। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে ফাঁকা জমি বিক্রির পরিকল্পনায়। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত কত জমি নিগমগুলোর হাতে রয়েছে, দু’টি সংস্থাকে দিয়ে সে ব্যাপারে সমীক্ষা করিয়েছিল সরকার। দুই রিপোর্টেই জানানো হয়েছে, ডিপোর জমির অধিকাংশের মালিকানা সংশ্লিষ্ট নিগমের হাতে নেই! এবং যে সব জমির মালিকানা রয়েছে, তার বড় অংশের নথিপত্রের হদিস মিলছে না!
কী করে হয়?
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “অনেক ডিপোর জমি দান হিসাবে পাওয়া। তাই ভোগদখল করলেও সরকারি ভাবে হয়তো নিগম তার মালিক নয়।” যদিও মালিকানার নথি গায়েব সম্পর্কে সদুত্তর মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন নিগমের হাতে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারোপোযোগী জমির পরিমাণ পাঁচশো কাঠার মতো। ওই জমিকে ৯৯ বছরের লিজ-চুক্তিতে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায় পরিবহণ দফতর, যে বাবদ প্রায় তিনশো কোটি টাকা আসবে বলে কর্তাদের দাবি। কিন্তু ওখানে কী ধরনের বাণিজ্যিক কাজ হতে পারে, জমি পাওয়ার যোগ্যতা কী হবে, নতুন প্রকল্প হলে তাতে সরকারের ভূমিকা কতটা থাকবে এ সব নিয়ে ভাবনা-চিন্তা এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলে জানান দফতরের এক কর্তা।
তিন দফা কর্মসূচির প্রথম দু’টো এ ভাবে কার্যত থমকে থাকায় তৃতীয়টি, অর্থাৎ তিন নিগমের সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব নিয়েও আর বিশেষ সাড়াশব্দ নেই। কর্তাদের একাংশ মানছেন, জমি লিজ দিয়ে কিংবা কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে নিগম পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। এমনকী, তার সাফল্যও অনিশ্চিত। তাঁদের মতে, সরকার যদি আন্তরিক ভাবে ভর্তুকি কমাতে চায়, তা হলে জ্বালানি-ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস-ভাড়া বাড়াতে হবে। নচেৎ কোনও দাওয়াইয়েই আসল রোগ সারবে না।
কিন্তু সরকার কি আদৌ সেই বাস্তবোচিত পথে হাঁটবে? সরকারি কর্তামহলেই ঘোর সংশয়।

অগাধ জলে
• স্বেচ্ছাবসর দিয়ে কর্মী সঙ্কোচন
• ফাঁকা জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার
• তিন নিগম যুক্ত করে নয়া সংস্থা

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.