বদলাচ্ছেন কর্মীরা,
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সরকারি পরিবহণ

র্মীদের মানসিকতা বদল আর হাতে হাতে ফল!
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, এই আপ্তবাক্যকে নতুন করে প্রমাণ করল রাজ্যের সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। সরকারি ভর্তুকির দাক্ষিণ্যে বসে না-থেকে বাড়তি উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লে যে আয় বাড়ানো সম্ভব, সেটাই সম্প্রতি হাতেকলমে করে দেখিয়েছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি), উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি)। খরচ কমিয়ে স্বচ্ছতার আমদানিতে লাভের পথে এগোচ্ছে কলকাতা ট্রাম কোম্পানিও (সিটিসি)। সরকারের আয়ও বাড়ছে, যাত্রীদেরও সুবিধা হচ্ছে।
ক্ষমতায় এসেই সরকারি পরিবহণ নিগমগুলিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিগমগুলির জন্য এত দিন বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হত রাজ্য সরকারকে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দেন, সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। খরচ কমিয়ে কী ভাবে আয় বাড়ানো যায়, সংস্থাগুলোকেই সেই পথ খুঁজে বার করতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
গোড়ায় অবশ্য শুধু এই নির্দেশ দিয়েই কাজ হাসিল হয়নি। তখন চাপ বাড়াতে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির বেতন আটকে দেওয়া হয়েছিল। আটকে দেওয়া হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনও। বেআইনি ভাবে নিযুক্ত হওয়া কর্মীদের খুঁজে বের করে তাদের ছাঁটাই করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল মহাকরণ থেকে। পরে বেতন এবং পেনশন চালু করলেও, ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী সরকারি নিগমগুলিকে ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার জন্য ছ’মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন। কোন নিগম কত দূর নিজের পায়ে দাঁড়াল, ছ’মাস পরে তিনি নিজেই তার হিসেব নেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
এর পরেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। দেওয়ালে কার্যত পিঠ ঠেকে যাওয়ায় কর্মীরা সকলেই উঠে-পড়ে লাগেন নিগমকে স্বনির্ভর করার চেষ্টায়। ছ’মাস অবধি অপেক্ষা করার দরকার হয়নি। ফল মিলেছে দু’মাসেই। সম্প্রতি মাদার ডেয়ারির ক্ষেত্রেও একই জিনিস দেখা গিয়েছে। দুধ বিপণনের কৌশল পাল্টেই লাভের মুখ দেখেছে তারা। এখন সরকারি পরিবহণ নিগমও সেই পথেই এগোচ্ছে।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের হিসেব, গত দু’মাসে সিএসটিসি-র টিকিট বিক্রি বাবদ আয় বেড়েছে চার লক্ষ টাকা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাস অবধিও সাকুল্যে ১৫ লক্ষ টাকার বিক্রি হত সিএসটিসি-তে। সম্প্রতি সেই অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লক্ষ টাকা। এনবিএসটিসি-তে দৈনিক টিকিট বিক্রি বেড়েছে দেড় লক্ষ টাকার মতো। টিকিট বিক্রি বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমেও (এসবিএসটিসি)। এসবিএসটিসি-র জন্য রাজ্য সরকারকে মাসে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ভর্তুুকি দিতে হয়। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়ন্ত আইকত বলেন, “গত অক্টোবর পর্যন্তও এসবিএসটিসি-তে মাসিক টিকিট বিক্রির পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটির টাকার কম। মার্চ মাসে কিন্তু সেখানে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার মতো।”
কী ভাবে এই ‘পরিবর্তন’ সম্ভব হল? নিগম কর্তারা মানছেন, চাপের মুখে কর্মীরা নড়ে বসেছেন। কোনও রকমে ‘ট্রিপ’ শেষ করার মানসিকতা বদলে যাত্রী আকর্ষণের দিকে মন দিয়েছেন তাঁরা। নির্ধারিত স্টপেও অর্ধেক সময় না দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার দিন শেষ। পাশাপাশি অলাভজনক রুটে বাস চালিয়ে জ্বালানি পোড়ানোর চেয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে লাভজনক রুটের উপরে। পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান, প্রতিটি নিগমেই উপরমহলে রদবদল হয়েছে। লাভজনক রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টিকিট বিক্রির পাশাপাশি, চেষ্টা হচ্ছে বিজ্ঞাপন খাতে আয় বাড়াতে। বিনা টিকিটে বাসে চড়ার প্রবণতা বন্ধ করতে বাড়ানো হয়েছে চেকিং। অনাবশ্যক খরচও যত দূর সম্ভব কমানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “সবাই মিলে ঝাঁপাতেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছে।”
এ ছাড়া গত দু’মাসে অবসর নিয়েছেন ২০ জন। তাতে মাসে পাঁচ লক্ষ টাকার মতো সাশ্রয় হচ্ছে বলেও সিএসটিসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন। এনবিএসটিসি-তেও বেশ কয়েকজন কর্মী সম্প্রতি অবসর নেওয়ায় বেতন বাবদ বাঁচছে মাসিক পাঁচ লক্ষ টাকা। আয় বেড়েছে কলকাতা ট্রাম কোম্পানি তথা সিটিসি-তেও। সংস্থার চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “এখনও পর্যন্ত সামান্যই আয় বেড়েছে। কিন্তু অস্বচ্ছতা, জটিলতা দূর হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর সুফল মিলবেই।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, আয় বাড়ানোর এই প্রবণতা বহাল রাখতে নিগমের কর্তারা এখন আগ্রহী কর্মীদের আগাম অবসরের বিষয়টি নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন। নিগমগুলি আর কী ভাবে এগিয়ে যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ, বুধবার এই চার নিগমের চেয়ারম্যান এবং এমডি-র সঙ্গে ফের বসছেন রাজ্যের পরিবহণ কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.