বিভিন্ন পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু আছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে এ বার পুনর্মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকের পাশে পরীক্ষার্থীকেও রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী মূল্যায়নের পরে পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র দেখতে পারেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পরীক্ষক যে-ভাবে মূল্যায়ন করেছেন, কোনও পরীক্ষার্থী তাতে সন্তুষ্ট না-হলে তাঁর খাতার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত একটি মামলায় এই রায় দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে বলেছেন, পুনর্মূল্যায়নের সময় সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীকেও পরীক্ষকের সঙ্গে বসিয়ে দিতে হবে। মূল্যায়নে যে-সব ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে বলে পরীক্ষার্থী দাবি করবেন, সেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। নম্বর বাড়লে নতুন মার্কশিট দিতে হবে তাঁকে।
আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তের এই রায়ের পরে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রেও উত্তরপত্রে ভুল-অসঙ্গতি দেখা দিলে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। উত্তরপত্র বা কোনও তথ্য দেখার পরে ভুল বা গাফিলতি চিহ্নিত হলে, তা যদি সংশোধিত না-হয়, তা হলে তথ্য জানার অধিকার আইনের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয় বলে বিচারপতির অভিমত।
প্রদীপ্তা খান নামে এক ছাত্রী হাইকোর্টে মামলা করে জানান, তিনি গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। ফল দেখার পরে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি তথ্য জানার আইনে কয়েকটি উত্তরপত্র দেখার জন্য সংসদের কাছে আবেদন করেন। তাঁকে উত্তরপত্র দেখানো হয়। আবেদনকারিণী প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দেখান বিচারপতিকে। ওই ছাত্রীকে ডেকে বিচারপতি জানতে চান, তাঁর অভিযোগের ভিত্তি কী। ছাত্রীটির অভিযোগ আপাতগ্রাহ্য মনে হওয়ায় বিচারপতি সংসদের আইনজীবী পার্থসারথি মল্লিককে ডাকেন। বিচারপতির সামনেই পার্থসারথিবাবুর কাছেও তাঁর অভিযোগের কারণ ব্যাখ্যা করেন আবেদনকারিণী। সংসদের আইনজীবীও মনে করেন, মূল্যায়নে কিছু ত্রুটি রয়েছে।
বিচারপতি তার পরেই সংসদের আইনজীবীকে ওই ছাত্রীর উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেন। পার্থসারথিবাবু বলেন, সংসদের বিধি অনুযায়ী পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই। বিচারপতি বলেন, তথ্য জানার অধিকার আইনের উদ্দেশ্যটাই তো তা হলে ব্যর্থ হয়ে যায়! যদি ঠিক উত্তরে ঠিক নম্বর দেওয়া হয়নি দেখেও প্রতিকার করা না-যায়, তা হলে উত্তরপত্র দেখে কী লাভ? হাইকোর্ট উত্তরপত্রের পুর্নমূল্যায়ন করতে পারে না। কারণ তাদের সেই পরিকাঠামো নেই। কিন্তু হাইকোর্ট পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিতে পারে। এর পরেই তিনি ওই আবেদনকারিণীর উত্তরপত্র ফের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন। |