আইসিডিএসে নিয়োগের জন্য আবেদন অন্য জেলা থেকেও |
জঙ্গলমহলে আতঙ্ক যেন অতীত! আইসিডিএস সুপারভাইজার পদের জন্য আবেদনপত্র জমার বহর দেখেই এমনটা মনে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের।
সম্প্রতি জঙ্গলমহলে আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য সরকার। চলতি মাসের ২৯ তারিখ পরীক্ষার দিনও ঠিক হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসের মধ্যেই নিয়োগের কাজ শেষ করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছে সরকার।
আবেদনপত্র খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৪০০ শূন্যপদের জন্য ৪৩ হাজার ৭৬৬ জন আবেদন করেছেন। আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন মালদা, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং, এমনকী কলকাতার তরুণীরাও!
এই সে দিনও জঙ্গলমহলের নাম শুনলে আঁতকে উঠতেন মানুষ। ভ্রমণপিপাসু মানুষও ভুলে গিয়েছিলেন অপরূপ কাঁকড়াঝোরের কথা। প্রতিদিন সকালেই খবরের কাগজে রক্তমাখা দেহের ছবি দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের মানুষ। এখন সেই অবস্থা নেই। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর ছবিটা অনেকটাই বদলছে। গত নভেম্বরে বুড়িশোলে কিষেণজির মতো মাওবাদী শীর্ষনেতার মৃত্যু, জাগরী বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতোদের আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদেরও দাবি, শান্তির পথেই এগোচ্ছে জঙ্গলমহল। ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবন। উন্নয়নের কাজেও গতি আসছে। সেই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসাবেই প্রশাসনিক কর্তারা আইসিডিএসে সুপারভাইজার পদে নিয়োগের আবেদনের প্রসঙ্গ আনছেন। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “মহিলা ছাড়া এই পদে কাউকেই নিয়োগ করা যায় না। জেলার বাইরে থেকেও মহিলারা যদি জঙ্গলমহলে চাকরির জন্য আবেদন করেন, প্রত্যন্ত এলাকায় থাকতে হবে জেনেও, তা হলে বলতেই হবে শান্তি ফিরছে। যদি আগের অবস্থা থাকত, শুধু রোজগারের তাড়নায় (স্থায়ী সরকারি চাকরি, ইন্সপেক্টর পদমার্যাদা হলেও) কেউ এ-সব এলাকায় যেতেন না। বিশেষত, অশান্তির সময়ে একাধিক অঙ্গনওয়াড়ি-কর্মীও যেখানে নিহত, নিখোঁজ হয়েছেন। সে খবর অনেকেরই জানা। অবস্থা বদলেছে বলেই বাইরের জেলা থেকেও এখানে কাজের আবেদন আসছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া--রাজ্যের এই তিন মাওবাদী-প্রভাবিত জেলার ব্লকগুলিতে আইসিডিএস সুপারভাইজারের পদে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। তিনটি জেলা মিলিয়ে প্রায় ৪০০ শূন্যপদ রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১১টি ব্লকে শূন্যপদের সংখ্যাই সর্বাধিক--২৪৪টি। নিয়োগের জন্য আগেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। আবেদনপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১০ হাজার ৫৬০ জন মহিলা আবেদন করেছেন। কোচবিহারের ৩৩৬ জন, দার্জিলিংয়ের ৫৮৩ জন, দক্ষিণ দিনাজপুরের ৭৬০ জন, উত্তর দিনাজপুরের ৩৬৭ জন, মালদা-র ১৫২২ জন, এমনকী কলকাতারও ১৭০০ মহিলা এই চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই আবেদনপত্র এসেছে। মূলত, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একজন করে আইসিডিএস সুপারভাইজার-পদ রয়েছে। যাঁদের কাজ বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন। সেখানে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে কি না, কর্মীরা নিয়মিত যাচ্ছেন কি নাএ সবই দেখার দায়িত্ব তাঁদের। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই সুপারভাইজারদের থাকতে হবে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেও একদা আতঙ্কের জঙ্গলমহলে চাকরির জন্য আগ্রহ দেখা দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি জেলাতেই পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। |