বাঘমুণ্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
টেবিল থেকে পড়ে মৃত্যু নবজাতকের, অভিযোগ
প্রসব আসন্ন বুঝে স্ত্রীকে গভীর রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। অভিযোগ, ‘লেবার রুমে’ নার্স বা চিকিৎসক ছিলেন না। হঠাৎ ওই বধূর প্রসব হয়ে যায় এবং লেবার রুমের টেবিল থেকে মাটিতে ছিটকে পড়ে নবজাতক। সেই চোটেই সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছেবাঘমুণ্ডির পাথরডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গাফিলতির এই অভিযোগ তুলেছেন ওই দম্পতি। ঘটনাটি প্রায় এক মাসের আগে হলেও সম্প্রতি তাঁরা বাঘমুণ্ডির বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই দম্পতির অভিযোগ, টেবিল থেকে পড়ে যাওয়ায় মারাত্মক চোট পাওয়া নবজাতকটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা তাঁরা করলেও ১ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসনও। বাঘমুণ্ডির বিডিও শুভঙ্কর রায় বলেন, “৩ এপ্রিল ওঁরা আমার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি গুরুতর। আমি মহকুমাশাসককে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছি, যাতে এই অভিযোগের তদন্ত কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে করানো হয়। বিএমওএইচের (ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক) কাছে রিপোর্টও চেয়েছি।” বিএমওএইচ নরেন্দ্রনাথ সোরেন বলেন, “ঘটনার রাতে রাতে কার কার ডিউটি ছিল, এ সমস্ত বিষয় জানতে চেয়েছেন বিডিও। আমি তাঁকেও এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছি।”
অভিযোগকারী, বাঘমুণ্ডি ব্লকের সিন্দরি গ্রামের বাসিন্দা পরেশচন্দ্র মাহাতো জানান, তাঁর আসন্নপ্রসবা স্ত্রী অনিতা মাহাতোকে গত ২১ মার্চ রাত পৌনে ২টোয় পাথরডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। নার্স বা চিকিৎসকের চেম্বারই ছিল বন্ধ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে এক নার্স বেরিয়ে এসে স্ত্রীকে ভিতরে নিয়ে আসতে বলেন। কিছু পরেই অনিতাকে ‘লেবার রুমে’ নিয়ে যাওয়া হয়। পরেশবাবুর অভিযোগ, “প্রসবের দেরি আছে বলে ওই নার্স ফের ভিতরে চলে যান লেবার রুমে একজন ধাত্রীকে রেখে। কিছুক্ষণ পরে তিনিও ঘুমিয়ে পড়েন। আমার মা লেবার রুমে যন্ত্রণায় ছটফট করা আমার স্ত্রীকে ধরে রেখেছিলেন। ওই সময় আচমকা প্রসব হয়ে যায় এবং আমার সদ্যোজাত পুত্রসন্তান টেবিল থেকে মাটিতে ছিটকে নীচে পড়ে যায়।” অনিতাদেবী বলেন, “ওই সময় কোনও ডাক্তার বা নার্স আমার কাছে ছিলেন না। টেবিল থেকে সন্তান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ওর নাড়িও ছিঁড়ে যায়!”
বীরগ্রাম পঞ্চায়েতের চুক্তি ভিত্তিক কর্মী পরেশবাবুর কথায়, “এর পর চিকিৎসক ও নার্সরা তৎপর হলেও যা সবর্নাশ হওয়ার হয়েই গিয়েছিল। সন্তানকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ঝাড়খণ্ডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাই। ওকে আইসিসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু আচমকা নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। ১ এপ্রিল ও মারা যায়।”
প্রথম সন্তানকে এ ভাবে হারিয়ে পরেশবাবু স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কাছে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বাঘমুণ্ডির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাই ভরসা। আমার প্রশ্ন একজন নার্স বা ডাক্তারবাবু যদি সে সময় লেবার রুমে থাকতেন, তাহলে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আমার সন্তান ও ভাবে টেবিল থেকে ছিটকে নীচে পড়ত না। হয়তো ওকে হারাতে হত না।”
পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার ঝরিয়াত বলেন, “আমি ঘটনার কথা সদ্য জেনেছি। অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিএমওএইচ কেন এত দিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘটনাটি জানাননি, তার সদুত্তর মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.