কিছু হলেই আইপিএসদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমারের বদলের প্রসঙ্গে শুক্রবার সূর্যবাবু এ কথা বলেন। এ ভাবেই আইপিএস মহলে বিভাজনের সূক্ষ কৌশল শুরু করল সিপিএম। দলের নেতাদের অভিযোগ, শিলিগুড়ির পার্টি অফিস আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই বদলি করা হল আনন্দ কুমারকে।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে ছিলেন সূর্যবাবু। আনন্দ কুমারের বদলির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “সব সময় বলির পাঁঠা হচ্ছেন আইপিএস অফিসারেরা। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে দয়মন্তী সেন, গার্ডেনরিচ কাণ্ডে রঞ্জিত্ কুমার পচনন্দা’র পর শিলিগুড়ির আনন্দ কুমার বদলি হলেন।” বিরোধী দলনেতার মতে, “পুলিশকে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশেরও নিরাপত্তা নেই।” ‘আইপিএস-দের পরিবর্তে মন্ত্রীদের বদলির ব্যবস্থা হলে খুবই ভাল হত’ মন্তব্য করে সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের দাবি, এখানকার মন্ত্রীর (গৌতম দেব) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” সূর্যবাবুর সুরেই উত্তরবঙ্গের অন্যতম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। আর তৃণমূলের আগুন লাগানোর চেষ্টা পুলিশ শোনেনি বলেই হয়তো পুলিশ কমিশনারকে বদলি হতে হল!”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের ইন্ধনেই শিলিগুড়ির সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ সূর্যবাবুর। তিনি বলেন, “পুলিশকে বাধ্য করে গোলমাল পাকিয়ে সিপিএম অফিসে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।” এ দিন বিকেলে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের ডাকে এক নাগরিক সভায় সূর্যবাবু বক্তৃতা করেন।
সূর্যবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “ঘটনার দিন, ৯ এপ্রিল আমি কলকাতায় ছিলাম। অথচ সিপিএম আমার নামে থানায় অভিযোগ করেছে।” পরের দিন তৃণমূলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সিপিএম অফিস থেকে হামলা করে গোলমাল পাকানো হয়েছে বলে গৌতমবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “এর পরেও আমার নামে দু’টি অভিযোগ করেছে সিপিএম। মানুষ সবই বুঝতে পারছেন।” গৌতমবাবুর মতে, “অশোকবাবুর মতো সিপিএম নেতারা মিথ্যে অভিযোগ করে প্রচারের আলোয় থাকার মরিয়া চেষ্টা করছেন।”
গত ৯ এপ্রিল দিল্লির ঘটনার পর সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে এক দফায় গোলমাল হয়। সিপিএম-তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পর দিন ফের দুই দলের মিছিল, পাল্টা মিছিলকে ঘিরে গোলমাল, সংঘর্ষ, ঢিল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। সিপিএম পার্টি অফিস থেকে পুলিশ অশোকবাবু, জেলা নেতা জীবেশ সরকার-সহ ৫১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অশোকবাবু, জীবেশবাবুদের ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়। বাকিরা গতকাল জামিনে মুক্তি পান। এই ঘটনা জেরেই মিত্র সম্মিলনী হলে নাগরিক সভার ডাক দেয় বামফ্রন্ট। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্তোষ সাহানির সঙ্গে দেখা করেন সূর্যবাবু। এই সন্তোষকেই পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর পরে তিনি দেশবন্ধুপাড়ায় অমিত দে-র বাড়িতে যান। অমিত জেলবন্দি হওয়ার পরে তাঁর মায়ের হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল। এ দিন অমিত শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে সূর্যকান্তবাবু জেলে অন্য একটি মামলায় বন্দি দলীয় কর্মী বাবু লামার সঙ্গে দেখা করেন। পরে শালুগাড়ায় গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন। |