হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দুই মাওবাদীর
মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত চাইল কোর্ট
লকাতা থেকে দুই মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতারের সাফল্য ধাক্কা খেল তাদের আদালতে পেশের সময়ে।
আদালতে এক জন ধৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে নজিরবিহীন ভাবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে তদন্ত করতে বললেন বিচারক। দ্বিতীয় জনের অভিযোগ, হাঁপানি থাকা সত্ত্বেও জেরার সময় দীর্ঘ ক্ষণ তাঁর মুখ ঢেকে রাখা হয়েছিল। বিচারকের নির্দেশ, এ বার থেকে আইনজীবীর সামনে জেরা করতে হবে তাঁকে।
পুলিশের হেফাজতে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু সম্প্রতি অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসনকে। এ বার পুলিশের হেফাজতে মারধর-অত্যাচারের অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে আদালতের এই নির্দেশ প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়াল আরও।
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) বৃহস্পতিবার রাতে যাদবপুরের প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোড থেকে জাকির হোসেন ও সব্যসাচী গোস্বামীকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দু’জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে হাজির করা হয়। মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সদস্য ও হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার বাসিন্দা জাকির আদালতে অভিযোগ করেন বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করার কথা বলা হলেও, ধর্মতলা চত্বর থেকে তাঁকে ধরা হয়েছিল গত সোমবার। চার দিন তাঁকে লালবাজারে এসটিএফ থানায় বেআইনি ভাবে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এজলাসে ট্রাউজার নামিয়ে তিনি বাঁ উরুতে আঘাতের চিহ্নও দেখান। ওই কালশিটে পড়ার কারণ জানাতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার অশোককুমার ঘোষ। মেডিক্যাল কলেজের যে রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার ধৃতকে পরীক্ষা করেছেন, জানাতে পারেননি তাঁর নামও। এর পরেই বিচারক বিষয়টি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে তদন্ত করে দেখতে বলেন।

জাকির হোসেন

সব্যসাচী গোস্বামী
পরে এসটিএফের কেউ এ নিয়ে মুখ না খুললেও লালবাজারের এক কর্তার দাবি, “আসামি নিজের মতো দাবি করতেই পারেন। কিন্তু আমরা তাঁকে কোনও রকম মারধর করিনি।”
দ্বিতীয় ধৃত সব্যসাচী মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়, আগরপাড়ার শক্তিপুর-গোস্বামী পাড়ায়। তাঁর আইনজীবী শুভাশিস রায় আদালতকে জানান, সব্যসাচী হাঁপানির রোগী জেনেও পুলিশ দীর্ঘ ক্ষণ তাঁর মুখ ঢেকে রেখেছিল। বিচারক এতে আইনজীবীর উপস্থিতিতে তাঁকে জেরা করা ও নিয়মিত তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এসটিএফের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও চারটি কার্তুজ মিলেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। এসটিএফ দু’জনকেই ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। বিচারক জাকিরকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতে ও সব্যসাচীকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গোয়েন্দাদের দাবি, সব্যসাচী ওরফে কিশোর ওরফে বাবু ২০০০-এ মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক ও ২০০৪ সালে রাজ্য কমিটির সদ্য হন। ২০১১-র নভেম্বরে নিহত হওয়ার মাসখানেক আগেও কিষেণজি জঙ্গলমহলে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। কিষেণজির সঙ্গে একই ডেরায় এক রাত কাটান কিশোর। আকাশ ও সুচিত্রার সঙ্গেও সে সময়ে কিশোরের দেখা হয়েছিল। কিষেণজির সঙ্গে তাঁর নিয়মিত চিঠিতে যোগাযোগ ছিল। কিষেণজি নিহত হওয়ার পরেও একাধিক বার জঙ্গলমহলে গিয়েছেন কিশোর। মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রমের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা থেকে মাওবাদীদের সিটি কমিটির সম্পাদক অভিষেক মুখোপাধ্যায়কে যে-দিন এসটিএফ গ্রেফতার করে, সে দিনই কিশোরের বাড়িতে হানা দিলেও অল্পের জন্য হাতছাড়া হন।
পুলিশ সূত্রের খবর, জাকির ও কিশোর প্রথম গ্রেফতার হন ২০০৫-এ, সিআইডি-র হাতে। ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে ছাড়া পান দু’জনে। পার্টির নির্দেশে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার একাধিক জায়গায় গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন কিশোর। তার আগে নোনাডাঙা উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে কিশোরের ভূমিকা ছিল বলে গোয়ন্দারা জানতে পেরেছেন। জাকির শহরাঞ্চলের চটকল ও অন্যান্য কলকারখানায় মাওবাদীদের গণ সংগঠন প্রসারের কাজ করতেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.