তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে ধৃত ৩
চাই ভেড়ির দখল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তপ্ত হাড়োয়া
মেছোভেড়ির দখল নিয়ে তৃণমল এবং সিপিএমের সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার গুলি, বোমায় ১৩ জন জখম হওয়ার পরেও শুক্রবার হাড়োয়ার পূর্ব কালীপুরে প্রকাশ্যেই দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল। গতকালের ঘটনায় সিপিএমের তিন কর্মীকে পুলিশ এ দিন গ্রেফতার করলেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। সংঘর্ষের দায় তৃণমূল এবং সিপিএম দু’পক্ষই পরস্পরের ঘাড়ে চাপালেও এ দিন পুলিশি টহলদারির মধ্যেই দুষ্কৃতীদের যে ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে তাতে এলাকায় শান্তি ফেরাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, গতকালের ঘটনায় গুলিতে জখম তৃণমূলকর্মীর বাড়িতে এ দিন গিয়েছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলাম। অভিযোগ, তিনি এলাকায় থাকাকালীন দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, হাড়োয়ায় কোন রাজনৈতিক দল কর্তৃত্ব করবে তা ঠিক করে ভেড়ির দখলদারি কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে আছে তার উপরে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে তাই ভেড়ির দখলদারি নিয়ে লড়াইয়ে মেতেছে তৃণমূল এবং সিপিএম।
পুলিশ সূত্রের খবর, ভেড়ির দখল নিয়ে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা ছিল এলাকায়। তার উপর দিন কয়েক আগে গোপালপুরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উত্তজেনা বাড়ে। বৃহস্পতিবার গোপালপুরে সিপিএমের পক্ষ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। তৃণমূলের দাবি, বিকেল চারটে নাগাদ বাড়ি ফিরে খেতে বসেছিলেন মাছ ব্যবসায়ী ও তাঁদের স্থানীয় নেতা প্রদীপ পাড়ুই। অভিযোগ, হঠাৎ কয়েক সশস্ত্র যুবক সেখানে হাজির হয়। তাদের মধ্যে একজন প্রদীপবাবুকে গুলি করছে দেখে তাঁর স্ত্রী মীরাদেবী বাধা দিতে যান। দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করলে গুলি লাগে তাঁর কোমরে। এই অবস্থায় কোনওরকমে সেখান থেকে পালিয়ে যান প্রদীপবাবু। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে এলাকার লোকজন রুখে দাঁড়ালে দুষ্কৃতীরা গুলি ও বোমা ছুড়লে তাতে কয়েকজন জখম হন।
এলাকায় সাংসদ নুরুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরেও পুলিশ সে ভাবে ব্যবস্থা না নেওয়ায় শুক্রবারেও পূর্বকালীপুরে দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। যদিও এলাকায় পুলিশি টহলদারি ছিল। এ দিন আহত দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে যান বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলাম। সাংসদ এলাকায় থাকাকালীনই দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের পাশপাশি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন সাংসদ। এ দিন তিনি বলেন, “রাস্তায় আসার সময় দেখলাম আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরচে দুষ্কৃতীরা। আসার পরে শুনলাম বোমের আওয়াজও। ওসিকে বলেছি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে।”
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পুলিশি টহলদারি এবং সাংসদের উপস্থিতিতে যে ভাবে এ দিন দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে তাতে তাদের পিছনে যে রাজনৈতিক দলের মদত রয়েছে তা পরিষ্কার। যদিও গণ্ডগোলের জন্য তৃণমূল এবং সিপিএম উভয়েই একে অন্যের উপরে দোষ চাপিয়েছে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “হাড়োয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে সিপিএম। তাই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের উপরে আক্রমণ করছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই ওদের লক্ষ্য।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যারা ঘোরাঘুরি করছে বা সাংসদ এলাকায় থাকাকালীন বোমাবাজি করেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”
সিপিএমের হাড়োয়া উত্তর লোকাল কমিটির সম্পাদক ভুবন মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “গ্রামে থাকলে সিপিএম করতে হবে বলে হুমকি ও মারধর করা হচ্ছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। প্রতিবাদ করায় আমাদের লোকদের ওরা মারল। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করল। আর পুলিশ আমাদেরই দলের তিনজনকে গ্রেফতার করল। অথচ আমরা যখন অভিযোগ জানাতে গেলাম তখন তা নেওয়া হল না।” তাঁর আরও দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশ কিছু করছে না।”
অভিযোগ না নেওয়া নিয়ে সিপিএম যে দাবি করেছে তা উড়িয়ে দিয়ে বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক পক্ষের অভিযোগ পাওয়ার পরেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য পক্ষ অভিযোগ করলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশের টহলদারির মধ্যেই দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.