লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে আর টেন্ডার ডাকা হয়নি। প্রশাসনিক এই গাফিলতিতে যাতায়াত নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাগরদ্বীপের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা ঘাট থেকে লট-৮ ঘাট ও কচুবেড়িয়া পর্যন্ত লিজ চুক্তির ভিত্তিতে ভেসেল চলাচল করত। চলতি বছরের মার্চ মাসে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদীবেষ্টিত ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাসিন্দার যাতায়াতের উপায় একমাত্র নদীপথ। কাকদ্বীপ, সাগর বা ডায়মন্ড হারবার আসতে হলে ট্রলারে প্রায় এক ঘণ্টা নদীপথ পেরিয়ে কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে নামতে হয়। সাগরে গেলে নামতে হয় কচুবেড়িয়া ঘাটে। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে যাতায়াত। ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফলে তেমন সমস্যা হলে রোগী নিয়ে সাগর বা কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হয়। দ্বীপে পাঁচটি প্রাথমিক ও একটি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে হলে নদীপথ পেরিয়েই অন্যত্র যেতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। আর এই সব কারণেই নদীপথের গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সাগর পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে প্রতি বছর লিজ চুক্তির মাধ্যমে ফেরি চলাচল করে। |
কিন্তু এ বছর মার্চ মাসে লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে কোনও চুক্তি না হওয়ায় ভেসেল চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক। এর ফলে চরম সমস্যায় পড়েছে ঘোড়ামারা দ্বীপের মানুষ। সমস্যার মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে তড়িঘড়ি ব্যক্তি মালিকানায় ট্রলার চলাচল শুরু করলেও তা অনিয়মিত। যাত্রীভাড়াও আগের তুলনায় বেশি। তার উপর আগে যেখানে দিনে ১৩ থেকে ১৪ বার পারাপার চলত, এখন সেখানে দিনে ৩ থেকে ৪ বার পারাপার হচ্ছে। এর ফলে যেমন প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে তেমনই ঘাটে অপেক্ষা করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের। তা ছাড়া, আগে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ট্রলার চলাচল করলেও এখন তা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ফলে সাগরদ্বীপে যাওয়ার প্রয়োজন হলে লট-৮ ঘাটে এসে ফের ভেসেলে করে সাগরে যেতে হচ্ছে। এর ফলে যেমন সময় বেশি লাগছে, তেমনই খরচও বেশি হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) অলোকেশপ্রসাদ সরকার বলেন, “দিন কয়েকের মধ্যেই টেন্ডার ডেকে সমস্যার সমাধান করা হবে।”
নদীপথই যাতায়াতের একমাত্র উপায় হলেও ঘোড়ামারা দ্বীপে যাত্রীদের ওটানামর জন্য কোনও নির্দিষ্ট পাকা জেটিঘাট নেই। মুড়িগঙ্গায় ভাঙনের কারণে নদীবাঁধেই কাঠের পাটাতন লাগিয়ে কখনও বা এমনিই ওঠানামা চলে আসছে। ভাঙন রোধেও সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। প্রচুর মানুষ নিত্য যাতায়াত করলেও ঘাটে কোনও শৌচাগার পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একে ফেরি চলাচল অনিয়মিত। তার উপর রাতবিরেতে কেউ অসু্স্থ হয়ে পড়লে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। কারণ সন্ধ্যার পর ফেরি বা ট্রলার পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। মন্দিরতলা গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী নারায়ণ হালদার বলেন, “আমার মেয়ে কাকদ্বীপ কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ট্রলার চলাচল অনিয়মিত হওয়ায় গত এক সপ্তাহ হলে কলেজে যেতে পারেনি। বুদ্ধদেব দাস, তাপস জানাদের মতো অনেককেই রোজ কাজের খোঁজে কাকদ্বীপে যেতে হয়। অথচ অনিয়মিত ট্রলার চলাচলে সকলকেই সমস্যাই পড়তে হচ্ছে।
অনিয়মিত ভাবে ট্রলার চলাচলের অভিযোগ প্রসঙ্গে ট্রলারের মালিক ভূদেব সাগর বলেন, “যাত্রীদের অভিযোগ ঠিক নয়। তবে ট্রলারের সংখ্যা কম থাকায় কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ট্রলার চলাচল করছে না।”
সমস্যার কথা ভেবে লিজ চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই কেন তা নতুন করে করা হয়নি তার কোনও উত্তর মেলেনি সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অপূর্বরঞ্জন গিরি। তাঁর কথায়, “নতুন করে লিজ চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে ট্রলার চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ট্রলারের অনিয়মিত সার্বিস নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হবে।” |