|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ ২... |
যেখানে ভূতের ভয় সেখানেই... |
হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথায় তিন সেলিব্রিটি। শুনলেন সংযুক্তা বসু |
|
মহিলা দাঁড়িয়ে থাকতেন এখানে ওখানে
সুব্রত ভট্টাচার্য |
আমাদের বাড়ি ছিল শ্যামনগরে। সেই সময় শ্যামনগর গ্রাম। প্রায়ই দেখতাম একজন মহিলাকে ভূতে ধরত। মহিলা অদ্ভুত গলায় শব্দ করে কথা বলত। সেই গলা তার নয়, অন্য কারও। নিম গাছতলায় ওঝা এসে মন্ত্র পড়ে কত কী করত। তার পরই মহিলার গলা স্বাভাবিক হয়ে যেত। শ্যামনগরে প্রায়ই উদ্ভট সব ঘটনা ঘটত। রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ হঠাৎ রাতের আবছা অন্ধকারে দেখতাম কে যেন রেললাইন দিয়ে হেঁটে আসছে। উলটো দিক থেকে প্রবল গতিতে ট্রেন আসছে। “ও মশাই থামুন থামুন থামুন”, বলে ছুটে গেলে ছায়ামূর্তি মিলিয়ে যেত। শ্যামনগরের লোকজন এমন দৃশ্য রেললাইনে প্রায়ই দেখতেন। মা বলতেন,‘ওদের ধারে কাছে যাস না। ওরা অতৃপ্ত আত্মা।’
’৭৬ সালে সন্তোষ ট্রফি খেলার সময় একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। সেখানকার রাজবাড়িতে উঠেছিলাম। দিন নেই, রাত নেই একটা দৃশ্য চোখে পড়ত। মাথায় ঘোমটা দেওয়া, শাড়ি পরা এক মহিলা রাজবাড়ির আনাচে কানাচে রহস্যময় ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে তো মহিলা থাকার কোনও কথা নয়। একটা পরিত্যক্ত রাজবাড়ি। কাছে গিয়ে ডাকার চেষ্টা করলে মহিলা মিলিয়ে যেতেন। নির্জন জায়গা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে মহিলা এসে রাস্তা আটকে দাঁড়াবেনই। পরে জেনেছিলাম কোনও এক রানিকে তার ব্যভিচারের জন্য রাজবাড়িতেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তারই অশরীরী রূপ হাহাকার করে রাজবাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াত।
|
মামাবাড়িতে ভূত ছিল
অনীক দত্ত |
আমি ভূতে বিশ্বাস করি না কিন্তু ভয় অবশ্যই পাই। ছোটবেলায় তো একা ঘরে থাকলে গা ছমছম অবশ্যই করত। আজকাল অবশ্য সে রকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি এবং না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
তবে ব্যারাকপুরে মামাবাড়িতে অবশ্যই ভূত ছিল। বহু লোক ওখানে সাহেব-ভূত দেখেছে।
অন্য দিকে মুম্বইয়ের বান্দ্রার মাউন্ট মেরি রোডে আমার মায়ের কাকা, পরিচালক বিমল রায়ের বাড়ি। ওটা আসলে ছিল একটি পারসি বাংলো।
ওই বাড়িটাকে তো অনায়াসে ‘ভূত-বাংলো’ বলা যায়। ওখানে রোজই ভূত আসত। প্ল্যানচেট হত। আমি সেই রকম একটা প্ল্যানচেটের সাক্ষীও ছিলাম। আমার দাদুরা ছয় ভাই। সেই সময় তিন জন বেঁচে ছিলেন, বাকিরা মারা গিয়েছিলেন। যে তিন বোন বেঁচেছিলেন তাঁরা প্ল্যানচেটে তাঁদের মৃত ভাইদের ডাকেন, যার মধ্যে প্রয়াত বিমল রায়ও ছিলেন। আজও মনে আছে বেশ একটা রি-ইউনিয়ন হয়েছিল।
|
দিক হারিয়ে দৌড়তে লাগলাম
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় |
ফেলুদা সিরিজের ‘গোঁসাইপুর সরগরম’-এর শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম একটা রাজবাড়িতে। রাজবাড়িটা এত বড় যে দু’টো সল্টলেক স্টেডিয়াম ঢুকে যাবে। সেই বিশালত্বের মধ্যে খাঁ খাঁ করছে নির্জনতা। জনশূন্য বাড়িটার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আর এক প্রান্তের দিকে তাকালে গা ছমছম করত দিনদুপুরে। রাজবাড়ির সিঁড়িগুলো নেমে গিয়েছে চোরকুঠুরির দিকে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ দেওয়াল উঠে গেছে। দেওয়ালে কান পাতলে কাদের যেন কান্না শোনা যায়! সেই সময় রবিকাকু (রবি ঘোষ) জটায়ু করতেন। উনি আমাদের পইপই করে মানা করতেন এ দিক সে দিক যেতে। রাজবাড়ির জানলাগুলো খড়খড়ি ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করতাম ভেতরে।
আমরা খুব ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এক রাত্রে শ্যুটিং ছিল রাজবাড়িতে। যেখানে শু্যটিং হচ্ছে শুধু সেখানে ইলেকট্রিক আলো জ্বলছে। বাদবাকি রাজবাড়িটা অন্ধকারে ডুবে। বিরাট করিডরের মধ্যে চাপ চাপ অন্ধকার। কে যেন আমাকে ওই অন্ধকারের দিকেই টানতে লাগল। সবাই শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। আর আমি একা অন্ধকারের মধ্যে নিশির ডাকের মতো হাঁটতে শুরু করলাম। গরম কাল। লোকজন তখন দরদরিয়ে ঘামছে শ্যুটিংয়ের ঘরে। কিন্তু অন্ধকার করিডরে যেই ঢুকলাম, একটা ঠান্ডা বাতাস যেন আমাকে জড়িয়ে ধরল। কী রকম স্যাঁতস্যাঁতে একটা ঠান্ডা। আমি হাঁটছি আর মনে হল, পেছনে পেছনে কেউ যেন আসছে। কিন্তু একবারও ঘুরে দেখার সাহস পাচ্ছি না। হাঁটতে হাঁটতে কত দূর চলে গিয়েছিলাম জানি না। কোথাও এতটুকু আলো নেই। মনে হচ্ছিল আমার চার পাশে কারা সব হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। দূর থেকে ঘুঙুরের শব্দ আসছে। দিক হারিয়ে ফেলে দৌড়তে শুরু করলাম।
মনে হচ্ছিল হাজার হাজার ঘণ্টা ধরে দৌড়চ্ছি। হঠাৎ চোখে পড়ল শ্যুটিংয়ের ঘরটা। আলো জ্বলছে। ধড়ে প্রাণ এল।
|
কে যেন আমার গলাটা চেপে ধরল
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
অনেক দিন আগে দার্জিলিং গিয়েছিলাম শ্যুটিং-এ।
তখন মাঝরাত হবে বোধ হয়। ঘর অন্ধকার। আমার স্যুইটে আমি ছাড়া পাশের ঘরে আমার হেয়ার ড্রেসার।
হঠাৎ মনে হল কে যেন আমার বুকের ওপর চেপে বসছে। দম আটকে আসছিল। চেঁচাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনও শব্দ বেরোল না। দু’হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চাইছি ভারটা, কিন্তু আমার হাত উঠছে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এ ভাবে কত ক্ষণ চলেছিল খেয়াল নেই। হঠাৎই গলা থেকে ভারটা সরে গেল। তত ক্ষণে আমি ভয়ে কাঠ। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। ওই শীতেও কুলকুল করে ঘাম দিচ্ছে। পর দিন থেকে আমার ধুমজ্বর। আমার হেয়ার ড্রেসারকে ঘটনাটা বলতে সে পাত্তাই দিল না। বলল, “ধুস্, স্বপ্ন দেখেছ।” আমি শুধু ওকে বললাম, “সে যাই-ই হোক, তুমি আজ রাতে এ ঘরেই শোবে। ঘরের আলো জ্বালা থাকবে।”
রাতে ঘুম আসছিল না কিছুতেই। বহু ক্ষণ বাদে চোখের পাতাটা একটু বোধহয় লেগেছে, তখনই হঠাৎ আমার হেয়ার ড্রেসারের ডাকে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। “কী হয়েছে?” ওর মুখটা ফ্যাকাশে। আতঙ্ক ঠেলে বেরোচ্ছে চোখ দিয়ে। কোনও ক্রমে বলল, “আজ আমাকেও ...।” আমার তখন আর কথা বলার শক্তি নেই। গোটা ঘরটা যেন গিলে খেতে আসছে। কোনও ক্রমে রাত কাটল।
আমার শরীর এত খারাপ হয়ে গেল, চারদিন শ্যুটিংই ক্যানসেল করতে হল। ডাক্তার এলেন। জানা গেল নিউমোনিয়া হয়ে গিয়েছে।
পরে শুনেছিলাম ওই ঘরে কেউ নাকি আত্মহত্যা করেছিল। এবং মাঝেমাঝেই তার উপদ্রব সইতে হত ট্যুরিস্টদের।
এখন আর সেই হোটেলটা নেই।
|
|
বলিউডি ভূত
৫টি সাড়া জাগানো হিন্দি ভৌতিক ছবি |
• গুমনাম
(নন্দা, মনোজকুমার, প্রাণ)
• বিশ সাল বাদ
(বিশ্বজিৎ, ওয়াহিদা) |
• মহল
(অশোককুমার, মধুবালা)
• ভূত বাংলা
(মেহমুদ, তনুজা) |
• পহেলি
(শাহরুখ, রানি মুখোপাধ্যায়)
|
|
|
মরণের পরে |
|
ডা. রেমন্ড মুডি |
বইটির নাম ‘লাইফ আফটার ডেথ’। লেখক ডা. রেমন্ড মুডি। ভদ্রলোক মার্কিন দেশের একজন মনোবিদও বটে। ১৯৭৫ সালে তিনি ওই বইটি লেখার পর সারা পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। তার অন্যতম কারণ, বইটিতে প্রথম বার মুডি ‘নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। মৃত্যুর পরে ‘জীবন’ কেমন, তার ‘জলজ্যান্ত’ বিবরণ দিয়ে মুডি চাঞ্চল্য ফেলে দেন। তার পর থেকে এই বিষয় নিয়ে অন্যান্য লেখকদের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়। সিনেমাও হয় প্রচুর। যদিও এর আগেও বেশ কিছু ফিল্মের বিষয় ছিল ‘নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স’। কিন্তু শব্দবন্ধটির জনক বলতে গোটা পৃথিবী আজও মুডিকেই চেনে। মুডির অন্যান্য বইগুলি হল ‘দ্য লাইট বিয়ন্ড’, ‘রি-ইউনিয়নস’, ‘লাইফ আফটার লস’, ‘কামিং ব্যাক’, ‘রিফ্লেকশনস’ ও ‘দ্য লাস্ট লাফ’।
|
|
মৃত্যু, আত্মা, হলিউড |
মৃত্যু-কাছাকাছি অভিজ্ঞতা নিয়ে ৯টি পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র |
• রেজারেকশন (১৯৮০, পরিচালক: ড্যানিয়েল পেট্রি)- ছবির নায়িকা এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়েন। তাঁর স্বামী মারা যান। কিন্তু তিনি শেষমেশ বেঁচে যান। এমনকী তিনি লক্ষ করেন, অন্যকে সুস্থ করে তোলার এক দুরূহ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন তিনি।
• সেভড বাই দ্য লাইট (১৯৯৫, পরিচালক: লিউইস টিক)- ভয়ংকর ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছবির নায়ক ড্যানিয়ন ব্রিকলের ‘নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স’ হয়। পরে দেখা যায়, তিনি প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক হয়ে উঠেছেন।
• ঘোস্ট ড্যাড (১৯৯০, পরিচালক: সিডনি পয়টিয়ার)- এক ভদ্রলোক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর ভূত হয়ে ফিরে আসেন পৃথিবীতে। তাঁর মোলাকাত হয় এক বিজ্ঞানীর সঙ্গে। তাঁর বিষয় পরলোক চর্চা।
• ডেড এগেন (১৯৯১, পরিচালক: কেনেথ ব্রানাঘ)- লস এঞ্জেলেস-এর এক গোয়েন্দার পানশে জীবনে হঠাৎ এক সুন্দরী মহিলার প্রবেশ। ভদ্রমহিলা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ করে তাঁর অনেক পূর্বজন্মের হিংসাত্মক ঘটনার বেশ কিছু স্মৃতি ফিরতে থাকে। তার একটি হল, তাঁর খুনে স্বামীর। ভদ্রমহিলার ধারণা, সেই ‘স্বামী’ নাকি এই গোয়েন্দা। |
|
ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ |
• হার্ট অ্যান্ড সোল (১৯৯৩, পরিচালক: রন আন্ডারউড)- চার জন ভাল মানুষ যে রাতে মারা গেলেন, সে রাতেই এক শিশু জন্ম নিল। ওই মৃত চার জন হয়ে গেলেন দেবদূত। এমনকী শিশুটির অভিভাবকও।
• মেড ইন হেভেন (১৯৮৭, পরিচালক: অ্যালান রুডল্ফ)- অপরিণত বয়েসে নায়কের মৃত্যু। এ ঘটনা থেকেই ছবির শুরু। মৃত্যুর পরে তাঁর সঙ্গে আর এক বিদেহী মহিলা অ্যানির আলাপ হয়। অ্যানির আত্মা পৃথিবীতে বন্দি। তাঁকে কাছে পেতে মৃত নায়ক ঝুঁকি নিয়েও ফিরতে চান পৃথিবীতে।
• দ্য সার্চ ফর ব্রিডি মারফি (১৯৫৬, পরিচালক: নোয়েল ল্যাংকলে)- হিপনোটিজমের পর এক মহিলা তাঁর পূর্ব জীবন, এমনকী মৃত্যুর কথাও বলতে পারেন।
• আ ক্রিসমাস ক্যারল (১৯৮৪, পরিচালক: ক্লাইভ ডোনার)- এক কৃপণ ব্যক্তির সঙ্গে তিন আত্মার দেখা হয়ে যায়। সেই আত্মারা তাঁকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে দেখায়, তাঁর স্বভাবের জন্য চারপাশের লোকজন কত দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, হয়ে চলেছেন, এমনকী আগামীতেও হবেন। তাঁকে বলা হয়, চাইলে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের পরিবর্তন ঘটাতেই পারেন।
• ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৭, পরিচালক: ফ্রাঙ্ক কাপরা)- এক ভদ্রলোক আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চাইলে দেবদূত তাঁকে বাধা দেন। তিনি দেখান, যখন তিনি থাকবেন না, পৃথিবীটা কেমন হবে। |
|
|
|
|
|