|
|
|
|
বরাদ্দের তিন বছর পরেও হল না ভবন,
ছাদে হোগলা পাতা ঘিরে পড়াশোনা |
আনন্দ মণ্ডল • শকুড়া |
জমি আছে।
বরাদ্দও হয়েছে।
কিন্তু তিন-তিনটে বছর কেটে গেলেও পাঁশকুড়ার রাতুলিয়ায় আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়নি। স্কুলের প্রায় ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী বসছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদেহোগলা পাতায় ছাওয়া একটি ঘরে গাদাগাদি করে। রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের ওই স্কুলের ভবন তৈরির দায়িত্ব প্রথমে পূর্ত দফতর ও পরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমকে দেওয়া হয়েছিল। এতদিনেও তারা কাজ করে উঠতে পারল না কেনজানা যায়নি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাজ্যের অন্য জেলায় যে সংস্থা এই আবাসিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরি করেছে, তাদের দিয়েই কাজ করানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল। ওই সংস্থার লোকেরা একবার এসে জায়গা-জমি দেখেও গিয়েছেন। কিন্তু তারপর আর প্রশাসনিক স্তরে ফাইল এগোয়নি।
২০০৮ সালে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমানে দু’টি করে ও জলপাইগুড়ি, দুই মেদিনীপুরে একটি করে স্কুলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য এই সব উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আবাসিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের হস্টেল তৈরির জন্য যৌথ ভাবে অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। |
এই ভাবেই চলছে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস |
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের রাতুলিয়ায় পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন রাতুলিয়া গ্রামে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা প্রায় ১৫ একর খাস জমির মধ্যে ৮.৪৫ একর জমি চিহ্নিত করে। ২০০৯ সালের শেষ দিকে সরকারি ওই খাস জমি প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। বিদ্যালয় ভবন ও ছাত্রাবাস তৈরির জন্য ২০০৮-০৯ আর্থিক বছরে প্রথমে সাড়ে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। ভবন তৈরির দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্য পূর্ত দফতরকে। কিন্তু প্রায় দু’বছর কেটে গেলেও পূর্ত দফতর ওই কাজ না করায় বিদ্যালয় ভবন ও ছাত্রাবাস তৈরির দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। ইতিমধ্যে ওই কাজের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। কিন্তু শিল্পোন্নয়ন নিগম এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।
এ দিকে, এতদিনেও ভবন তৈরি না হওয়ায় দু’শো ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২০০৫ সালে চালু হওয়া ওই বিদ্যালয় ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে বসত রাতুলিয়া হাইস্কুলের একাংশে। ২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় স্থানান্তরিত হয় রাতুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে। হোগলাপাতা দিয়ে ঘেরা একচিলতে ঘরেই স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক পদের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ১১ জন এসেছেন। দু’জন কর্মীর পদে এখনও নিয়োগ হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মাইতি বলেন, “সম্পূর্ণ আবাসিক উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পেলেও বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন ও ছাত্রাবাস না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এখন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনের জন্য জমি আছে। টাকাও রয়েছে। তারপরেও ভবন হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না।” আটকে আছে কোথায়, খুলে না বললেও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের দ্বায়িত্বে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমন হাওলাদারের আশ্বাস, “ওই আবাসিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ছাত্রাবাস তৈরির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে, তৃণমূল রাজ্য সরকারের পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গীর জন্যই ওই বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার সিপিএম জেলা পরিষদ সদস্য তথা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম আমলে অনুমোদিত ওই বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির কাজ রাজনৈতিক কারণে শুরু করছে না বর্তমান রাজ্য সরকার।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ছাত্রাবাস তৈরির কাজ দ্রুত করার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।” |
|
|
|
|
|