|
|
|
|
বাড়ি হারিয়ে হাসপাতালই ঠিকানা |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
সালটা ছিল ১৯৯৯। অবিভক্ত মেদিনীপুরের তমলুকের কাছে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন এক মহিলা। প্রথমে তাঁর ঠাঁই হয় তমলুক হাসপাতালে, পরে মেদিনীপুরের জেলা হাসপাতাল। ’৯৯ থেকে ২০১৩। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছেন তিনি। সেখানের নার্স-কর্মীরাই যেন তাঁর পরিজন। হাসপাতালের খাতায় তাঁর পরিচয় গরবি মণ্ডল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তমলুকের কাছে লরির ধাক্কায় মাথায় আঘাত লেগেছিল ওই মহিলার। গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তমলুক মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে মেদিনীপুরে রেফার করা হয়। দিন পেরিয়েছে। মেদিনীপুর জেলা ভাগ হয়েছে। তমলুক মহকুমা হাসপাতাল এখন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা হাসপাতাল। আর মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল এখন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তবে গরবির ঠিকানা বদলায়নি। ওই মহিলাই জানিয়েছিলেন তাঁর নাম গরবি মণ্ডল। স্বামীর নাম মঙ্গল মণ্ডল। বাড়ি বর্ধমানের কুমুরডিহি গ্রামে। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলেও রয়েছে। যদিও ওই ঠিকানায় খোঁজ করে পুলিশ জেনেছে, কুমুরডিহি গ্রামে মঙ্গল মন্ডল নামে কেউ থাকেন না। ওই গ্রামের কেউ নিখোঁজও নেই। |
ভাল-বাসা। হাসপাতালের নার্সদের সঙ্গে গরবি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
গরবির বয়স এখন ৪৫। এখন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। দুই চোখের দৃষ্টি শক্তিও কম। মেডিক্যালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। অবশ্য গরবির দেখভালে ত্রুটি রাখেন না নার্স-স্বাস্থ্য কর্মীরা। নতুন পোশাক কিনে দেওয়াই হোক বা বাড়ি থেকে পায়েস এনে খাওয়ানোসবই করেন তাঁরা। হাসপাতালই যেন গরবির বাড়ি। নার্স-কর্মীরাও তাঁকে আপন করে নিয়েছেন। তাঁরা চান না, গরবি অন্য কোথাও যাক। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছেন নার্স ঝর্ণা সরকার। তাঁর কথায়, “ক’দিন আগে আমার মেয়ের জন্মদিন ছিল। বাড়িতে পায়েস হয়েছিল। ওঁর জন্যও পায়েস এনেছিলাম। উনি তৃপ্তি করেই খেলেন।” গরবিকে কী হোমে রাখা যায় না? তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছেন নার্স লিপিকা পাত্র। লিপিকাদেবীর কথায়, “অন্য কোথায় গেলে উনি কেমন থাকবেন জানি না। এখানেই ভাল আছেন। এখানেই থাক।”
হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “পুলিশকে জানানো হলেও কোনও ঠিকানা মেলেনি। তাই গরবি এখানে রয়েছেন।” |
|
|
|
|
|