ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে একটা কথা প্রায়ই শুনতে হয়‘‘স্যর, আমি ক্রিকেটের একজন বিরাট ভক্ত। আমার ছেলের নাম আপনার নামে মিলিয়ে গৌতম রেখেছি। আমি কি পরের ম্যাচের দু’টো টিকিট পেতে পারি? প্লিজ!”
কিংবা এ রকম কথাও কানে আসে। “হাই! গোতি, চিনতে পারছ? আমি ধ্রুব। ক্লাস সেকেন্ড বি, সেকশন ই! তুমি যখন সেকশন জি-তে ছিলে? আরে ভাই, আমাদের মধ্যে না হয় অনেক বছর কোনও যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি সে-ই ছেলেটা, আমাদের স্কুলে প্রথম যার অটোমেটিক শার্পনার ছিল। মনে পড়েছে আমাকে? প্লিজ, আমাকে পরের ম্যাচে চারটে টিকিট দেবে?”
সত্যি! তখন দিল্লি আর এখন কলকাতায়। স্বয়ংক্রিয় পেন্সিল ছোলার যন্ত্র থেকে শুরু করে বাচ্চার নামকরণ! যে কোনও ম্যাচের কমপ্লিমেন্টারি পাস পাওয়ার বাহানাগুলো কী মজারই না! কোনও সামান্য পরিচিত মুহূর্তের মধ্যে বন্ধু হয়ে যায়। কোনও বন্ধু ভীষণ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ বারের আইপিএল-ও তার ব্যতিক্রম নয়। |
তবে আমি সত্যিই জানি না, ঠিক কবে থেকে আর কী ভাবে এই কমপ্লিমেন্টারি টিকিট চাওয়ার কালচারটা গড়ে উঠেছে। বিনা পয়সায় কিছু পেতে কে না পছন্দ করে? তবে আমার প্রশ্ন তাদের নিয়ে, যাদের টিকিট কেনার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কমপ্লিমেন্টারির পিছনে ছোটে।
আমার হোটেলের ঘরে একজন এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিচ্ছিল, এটা নাকি উত্তর ভারতের কালচার। বিশেষ করে দিল্লির লোকেদের অভ্যেস। যে ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত না হতে পারার জন্য আমি দুঃখিত। কারণ, কমপ্লিমেন্টারি টিকিট চাওয়ার ব্যাপারটা আমি গোটা ভারতে দেখেছি। হয়তো দিল্লিতে একটু বেশি। যেহেতু সেটা আমাদের দেশের রাজধানী। বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রীদের শহর। দিল্লি এমন এক শহর, দেখে মনে হয় প্রায় প্রতিটা লোকের যেন কোনও না কোনও ভাবে পাসপোর্ট অফিস অথবা থানা কিংবা মন্ত্রীজির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।
সবার জানার জন্য বলছি, প্রত্যেক ভারতীয় ক্রিকেটার তাদের পরিবারের জন্য চারটে করে কমপ্লিমেন্টারি পাস পায়। যেগুলো স্টেডিয়ামের সেরা সিটের টিকিট। যেখানে খাবারদাবারও পরিবেশন করা হয়। যদিও ক্রিকেটাররা যতগুলো এ রকম পাস পায়, তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক পাসের দরকার থাকে তাদের। সে জন্য এটা প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, যে ক্রিকেটার তার ঘরের মাঠে খেলছে তাকে টিমের অন্য ক্রিকেটাররা নিজেদের কোটার কমপ্লিমেন্টারি পাস অফার করবে। যেমন চেন্নাইয়ে খেলা হলে বালাজিকে আমি পাস দিই। আবার আমরা দিল্লিতে খেললে বালাজি ঠিক উল্টোটা করে থাকে। |
যদিও আমি এই নিয়ে প্রবল দ্বিধায় যে, আদত খেলাটা নিয়ে মাতামাতি না করে আমরা কি তারকার পিছনে ছুটতেই বেশি আগ্রহী! কত নামজাদা স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে সেটা নিয়েও কি বেশি মাতামাতি করি? সম্প্রতি সচিন পাজি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কাছে পালাম গ্রাউন্ডে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে রঞ্জি সেমিফাইনাল খেলছিল। আমি শুনেছি, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান মাত্র আশি মিটার দূরে খেলা সত্ত্বেও ম্যাচের এক দিনও একশো জন দর্শক মাঠে হয়নি। যদিও প্রায় সব রঞ্জি ম্যাচেই কোনও প্রবেশমূল্য থাকে না। তা হলে এমন কেন? জানি না। আপনারা যদি কেউ জানেন, দয়া করে এই কাগজের ক্রীড়া সম্পাদককে মেল করবেন।
মোহালিতে একটা ম্যাচের আগে আমার পরম বন্ধু যুবরাজ সিংহ ওর ব্ল্যাকবেরি থেকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল “হ্যাঁ, আমার কাছে টিকিট আছে। তবে চণ্ডীগড় থেকে মোহালি যাওয়ার বাসের টিকিট!
|