গুলির লড়াই, হত ১ বস্টন-চক্রী
স্টন বিস্ফোরণে অভিযুক্ত দু’জনের ছবি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে মারা গেল তাদের এক জন। নিহতের নাম টামেরলান জারনেভ। তার ভাই, বছর উনিশের জোকহারকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, অভিযুক্তেরা আদতে রাশিয়ার চেচনিয়ার বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই চেচনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে সংঘর্ষ দেখেছে তারা। আমেরিকায় আসার আগে দুই ভাই বহু বছর কাজাখস্তানে ছিল। পরে মার্কিন ভিসা নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমেরিকায় রয়েছে তারা।
ম্যারাথন বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে দু’জনের কিছু ছবি ও ভিডিও গত কাল দুপুরবেলা প্রকাশ করে এফবিআই। এক জনের মাথায় সাদা টুপি। অন্য জনের মাথা ঢাকা কালো বেসবল ক্যাপে। তাদের পরিচয় অবশ্য তখনই খোলসা করা হয়নি। ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর যখন চারিদিকে হুলূস্থুল পড়ে গিয়েছে, ত্রস্ত পায়ে যে যে দিকে পারছেন দৌড়চ্ছেন, তার মধ্যে কতকটা নিশ্চিন্ত হয়েই হেঁটে যাচ্ছে অভিযুক্তেরা। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি যেখানে হয়েছিল, তার ঠিক পাশে জোকহারকে নিজের বড় ব্যাকপ্যাক নামিয়ে রাখতেও দেখা যায়। এদের কাউকে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর দিতে দেশবাসীর কাছে আর্জি জানায় পুলিশ।
বস্টনের পথে-পথে জোকহারের সন্ধান। শুক্রবার। ছবি: এএফপি।
অপরাধীদের খোঁজে দেশ জুড়ে যখন চিরুনি তল্লাশি চলছে, তখন একের পর এক বিক্ষিপ্ত হামলা চালিয়ে দুই সন্দেহভাজন নিজেরাই প্রকাশ্যে চলে আসে। কাল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হঠাৎই ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে খবর আসে, গুলি চলছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। মিডলসেক্সের ডিসট্রিক্ট্র অ্যাটর্নি মাইকেল পেলগ্রো জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পৌঁছে যায় সেখানে। তত ক্ষণে অবশ্য গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তারক্ষীর দেহ। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, এমআইটি ক্যাম্পাসের কাছে একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়েছিল জোকহার। তখনই নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তার।
কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝে ওঠার আগেই ফের আক্রমণ। এ বার কেমব্রিজের থার্ড স্ট্রিটে। মার্সিডিজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। দু’জন তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়ি ছিনতাই করেছে বলে খবর আসে। কিছু ক্ষণ পর অবশ্য মেমোরিয়াল ড্রাইভের এক পেট্রোল পাম্পের সামনে অক্ষত অবস্থাতেই ওই ব্যক্তিকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
কাল রাতেই গাড়ির খোঁজে তল্লাশিতে নামে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শেষে বস্টনের ওয়াটারটাউন শহরের কাছে খোঁজ মেলে মার্সিডিজের। দু’পক্ষের গুলিযুদ্ধে কয়েক মুহূর্তেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান। গুলি বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ করে বোমাও ছোড়ে জঙ্গিরা। সংঘর্ষে জখম হয়েছেন এমবিটিএ-র এক পুলিশকর্মী। পুলিশের পাল্টা আক্রমণে আহত হয় টামেরলান জারনেভ। রাত দেড়টা নাগাদ বেথ ইজরায়েল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে, মারা যায় সে। তার ভাই জোকহার অবশ্য এখনও অধরা।
শুক্রবার সকাল হতে না হতেই ওয়াটারটাউন, নিউটাউন, ওয়ালথাম, কেমব্রিজ এলাকা ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। জোকহারকে ধরতে প্রত্যেকটা বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।
শুক্রবার সকালে ম্যাসাচুসেটস পুলিশের তরফে টিম আলবেন জানান, “বস্টনের বিস্ফোরণে এফবিআই যাদের শনাক্ত করেছিল, এর পিছনে তাদেরই হাত রয়েছে। এখন সব থেকে আগে দরকার দেশবাসীর নিরাপত্তা রক্ষা করা।” বস্টনের পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ডেভিস এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, “পলাতক জোকহার এক জন সন্ত্রাসবাদী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।”
দ্বিতীয় সন্দেহভাজন জোকহার। নিহত বস্টন-চক্রীর ভাই। ছবি: এপি।
তাঁর দুই ছেলে যে ম্যারাথনে বিস্ফোরণের চক্রান্ত করেছিল, বিশ্বাসই করতে পারছেন না টামেরলান ও জোকহারের বাবা আনজোর জারনেভ। দেশ তোলপাড় করে এফবিআই যাকে খুঁজছে সেই জোকহার আমেরিকায় ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। ছুটিতে ছেলেরা বাড়ি ফিরবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন তাঁরা। জোকহার যেখানে পড়ত সেই ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সে থাকত কি না, তা নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্তৃপক্ষ। এক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে চেচনিয়ার স্বাধীনতা ও ইসলামের প্রতি নিজের বিশ্বাসের কথাও স্পষ্ট করে জানিয়েছে জোকহার। ওয়াশিংটনের কাছে মন্টগোমারীতে থাকেন জোকহারের কাকা রাসলান জারনি। তিনি জোকহারকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। রাসলানের দাবি, জোকহার গোটা চেচেন জাতিকে বদনাম করেছেন।
রাশিয়ার চেচনিয়া সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বহু দিন ধরে। মস্কো ও আশপাশের অঞ্চলে একাধিকবার হামলা চালিয়ে বাসিন্দাদের পণবন্দি করেছে চেচেন জঙ্গিরা। তবে আমেরিকাকে নিশানা হিসাবে আগে কখনওই বেছে নেয়নি তারা। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাতে যোগ দিয়েছিলেন বিদেশসচিব জন কেরি ও গোয়েন্দা কর্তারা।

দোষী নয় ত্রিপাঠী, প্রমাণ টুইটারেই
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারে যাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাত্র, বছর বাইশের সুনীল ত্রিপাঠীকে বস্টন ম্যারাথনে জঙ্গি হানার অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, মত বদলেছেন তাঁরা। টুইটারই সুনীলের নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দিল। বস্টনে জঙ্গি হানার পর যে দুই সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল তারা দু’জনেই চেচনিয়ার বলে জানাল বস্টন পুলিশ। এর পরই সুনীলের উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে পোস্ট আসতে থাকে টুইটারে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সুনীল ও তাঁর পরিবার।

পুরোন খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.