কালবৈশাখীতে শুধু মাত্র ধান খেত নয়, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হল বেশ কয়েকটি চালকলও। জেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে খবর, অন্তত ৭০টি চালকলের অল্প বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথাও বা চালকলের চিমনিও ভেঙে পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি জেলা চালকল শিল্পে।
বর্ধমানের মেমারির মণ্ডলগ্রামে অবস্থিত দু’টি চালকলের ছাদের অ্যাসবেস্টস প্রায় সবটাই ক্ষতিগ্রস্ত। শিলাবৃষ্টির জেরে চালকলে থাকা ধান, চাল বা ধানের খোসার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অনেকগুলি মোটরও পুড়ে গিয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে আহত হয়েছেন অনেক শ্রমিকও। চালকল দু’টির মালিক মলয় কেশ ও সৌমেন কোলের দাবি, প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান নষ্ট হওয়াতেও। এর জেরে ধান সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চালকল ছাড়াও তেল উত্পাদক বিভিন্ন কারখানাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। বর্ধমানের একটি তেল উত্পাদক সংস্থার কর্ণধার রামদাস দত্ত বলেন, “অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে আমাদের বিমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার ওই ক্ষতিপূরন কী করে পাব, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।”
জেলা চালকল মালিক সমিতির সম্পাদক দেবনাথ মণ্ডল জানান, চালকলগুলির প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংক্রান্ত বিমা রয়েছে। কিন্তু বিপর্যয়ের পরিমাণ এই বিমা সংস্থাগুলি এখনও দেখে উঠতে পারেনি। তাঁর কথায়, “ওই বিমা সংস্থাগুলি যাতে বিপর্যয়ের পরিমাপ করে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগী হয়, তার জন্য আমরা জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানাব। তবে এই বিপর্যয়ের জেরে চালকলগুলিতে ধানের সরবরাহ কমে যাবে। এমনিতেই এত দিন ধানের অভাবে চালকলগুলি অর্ধেক উত্পাদন করছিল। এবার তাও কমবে বলে আমাদের আশঙ্কা।” বর্ধমান চালকল মালিক সমিতির এক সদস্যের আবার বক্তব্য, “নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত চালকলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। জলে কাদায় চাপা পড়া ধান না কাটা পর্যন্ত জেলার ধানের ফলন ঠিক কতটা মার খাবে, তা অবশ্য বলা সম্ভব নয়। তবে ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমলেই সমস্যা দেখা দেবে। খোলাবাজারে ধানের দাম অনেক বেড়ে যাবে।”
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আমাদের জেলায় ক্ষতির বহর প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে আমি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছি। ব্যাঙ্কগুলি চাষিদের স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদিতে পরিণত করতে রাজি হয়েছে বিপর্যস্ত চাষিদের নতুন করে ঋণও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই বৈঠকে।” তবে চালকলগুলির তরফে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে এখনও তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি। |