বাড়ির কাছেই অজয়। নদের তীরে ছুটে যাওয়ার বড় টান তাঁর। আর তাতে বাধা দিলেই শুরু হয় তাণ্ডব। স্বজনদের মারধর, জিনিসপত্র ভাঙচুর করে বাড়ি মাথায় তোলেন বছর বাইশের অমিত মাঝি। আর সে কারণেই গত দু’বছর ধরে তাঁর পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছেন বাড়ির লোকজন। কোথাও ঠিক মতো পরামর্শ না পাওয়ায় অমিতের চিকিত্সা করাতে পারেননি তাঁরা, দাবি পরিবারের।
মঙ্গলকোটের কোঁয়ারপুর গ্রামের দুলেপাড়ায় বাড়ি অমিতের। ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। মা উত্তরাদেবী খেতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। তিনি জানান, খানিকটা বড় হওয়ার পরে তাঁর দুই ছেলে অরবিন্দ ও অমিত সংসারের হাল ধরেন। কষ্টের সময় ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করেছিল। সেই সময়েই ছোট ছেলে অমিত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে তাঁর দাবি।
পরিবারের সদস্যেরা জানান, কয়েক বছর আগে থেকে সমস্যা শুরু হয়। অমিতের মন বাড়িতে টিকত না। তিনি বারবার ছুটে চলে যেতেন অজয়ের পাড়ে। সারা দিন সেখানেই থাকতেন। বাড়ির কেউ বাধা দিলেই মারধর করতেন। রেয়াত করতেন না পড়শিদেরও। |
প্রতিবেশী অভিরাম মাঝি, রণজিত্ মাঝিদের কথায়, “প্রথম দিকে বঁটি নিয়ে আমাদের তাড়া করত অমিত।” এর পরেই এক দিন অমিত নিখোঁজ হয়ে যান। প্রায় সাত মাস পরে আবার নিজেই ফিরে আসেন। তার পর থেকেই তাঁর পায়ে বেড়ি লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
উত্তরাদেবী বলেন, “ভাল হয়ে গিয়েছে মনে করে মাস ছয়েক আগে শিকলের বেড়ি খুলে দিয়েছিলাম। তার পরেই ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। বাড়ির সব গাছ কেটে ফেলে।” ফের শিকলবন্দি হয়ে অমিত। তাঁর বৌদি পূর্ণিমাদেবী বলেন, “বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়ায় দেওর আমার দেড় বছরের ছেলেকে আছাড় মারতে গিয়েছিল। কোনও রকমে তাকে আটকানো হয়। এখনও সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে শিউরে উঠি।”
শিকল-বন্দি অমিতের ঠিকানা এখন তাই মাটির বাড়ির দোতলায়। অল্প হেসে তাঁর প্রশ্ন, “আমি তো কিছুই করিনি। বাড়ি থেকে পালিয়েও যাইনি। তা হলে আটকে রাখে কেন?” গাছ কেটে ফেললেন কেন? তাঁর উত্তর, “গাছগুলোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারতাম না। তাই কেটে ফেলে ওদের মুক্তি দিয়েছি।”
তিন বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অমিতের কোনও চিকিত্সা হয়নি। অমিতের দাদা অরবিন্দবাবুর দাবি, “বছর দুয়েক আগে চিকিত্সা করানোর জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ঠিক মতো পরামর্শ কারও কাছে পাইনি। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি।”
কোঁয়ারপুর গ্রামের যুবক সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া ওঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।” মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “বিডিও-কে এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য বলব।” মঙ্গলকোটের বিডিও সুশান্তকুমার মণ্ডল বলেন, “আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব করা হবে।” |