সম্পাদকীয় ২...
সচলায়তন
বীন্দ্রজয়ন্তী পঁচিশে বৈশাখেই ফিরিতেছে। অন্যত্র পঁচিশে বৈশাখ জন্মজয়ন্তী পালিত হইলেও কবির শান্তিনিকেতনে এ-যাবত্‌ পয়লা বৈশাখ ছিল পঁচিশে বৈশাখ। না, বিড়ালদিবসে রুমালদিবস জাতীয় কাণ্ড নহে। কবির বিশ্বভারতীতে গ্রীষ্মের দাবদাহ, জলকষ্ট ইত্যাদি অসহনীয় ছিল বলিয়া প্রান্ত বৈশাখে সেখানে ছুটি, বৈশাখ পয়লাতেই তাই জন্মোত্‌সব পালনের রীতি চলিয়া আসিতেছিল। এ বার সেই ঐতিহ্যের বদল ঘটিল। প্রাচীন আশ্রমিকেরাও এই পরিবর্তন মানিয়া লইয়াছেন। সত্যই তো, শান্তিনিকেতন বর্তমানে আর জলবিহীন বৈশাখী-দিন যাপন করে না। নাগরিক জীবনের ‘উন্নততর’ সুবিধা সেখানে মেলে— পঁচিশে বৈশাখ পঁচিশে বৈশাখে ফিরিবে না কেন? অন্তত এ ক্ষেত্রে চলিয়া ‘আসিতেছে’র আওয়াজ উত্থাপন করা হয় নাই। এই সংশোধন স্বাগত। গালিলেয়োর বিশ্ববীক্ষাকে স্বীকার করিতে ভাটিকানের ধর্মগুরুরা প্রায় চার শত বত্‌সর সময় লইয়াছিলেন। তুলনায় এই সংশোধন তো নিতান্ত কম সময়ে ঘটিল। প্রশ্ন হইল, অন্যান্য বিষয়েও কি বিশ্বভারতী সচলায়তন হইতে পারে না?
প্রায়ই এমন হাহাকার শোনা যায়, বিশ্বভারতীতে নাকি ‘কবির আদর্শ’ ও ‘পরম্পরা’ মানা হইতেছে না। যাহা ছিল, তাহা মানিবার ভান করিয়া ও ধুয়া তুলিয়া অবশ্য প্রকারান্তরে যাহা করা হয়, তাহার নাম দেওয়া যাইতে পারে বিশ্বভারতীর ‘বোলপুরায়ণ’। ঐতিহ্যের নামে ছোট, ছোট, আরও ছোট করিয়া তুলিবার ইহা এক আশ্চর্য খেলা। যদি রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীকে বাঁচাইতে হয়, তাহা হইলে বৃহত্তর সংশোধন চাই। কোন পথে তাহা হইবে, খুব নির্দিষ্ট করিয়া বলিবার ও ভাবিবার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ জন্য সুযোগ্য চিন্তকদের সাহায্য আবশ্যক। মোদ্দা কথা অবশ্য দু’টি। বিশ্বভারতীতে সকল বিদ্যার চাষ হইবে, এমন না ভাবিয়া বিশ্বভারতীকে বিশেষ বিশেষ বিদ্যার চর্চাক্ষেত্র হিসেবে গড়িয়া তোলা কর্তব্য। সেই বিদ্যাগুলি কী হইবে, তাহা যুগের সহিত তাল মিলাইয়া নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা প্রাসঙ্গিক হইলে মান্য হইবে, তাহার অধিক বিশেষ কোনও গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি নাই।
দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল, এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক করিয়া তুলিতে হইবে। পুত্রকে পত্রে সে কথা জানাইয়াছিলেন কবি। ইহা অবশ্যই যথাযথ ভাবনা। কেবল বিশ্বভারতীর পক্ষে নয়, সাধারণ ভাবেই। উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে যে বিদ্যার চর্চাই হউক না কেন, তাহা যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়। তাহাই বীরভূমের বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বিশ্বভারতীর যথার্থ উত্তরণের পথ। বিশেষ জ্ঞানের আন্তর্জাতিক চর্চাকেন্দ্র হিসাবে ইহাকে গড়িয়া তুলিবার প্রচেষ্টা জরুরি। রবীন্দ্রনাথ সেই চেষ্টা সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করিতেন। তিনি পুরোহিততন্ত্র ও রাষ্ট্রতন্ত্রের মতো অচলায়তনকে কায়েম করিতে চাহেন নাই। কায়েমি প্রাচীর ভাঙিয়া নূতন জীবনধারাকে প্রবাহিত করিবার প্রচেষ্টাই তাঁহার দর্শনের উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য পূরণের অভিযান অবিলম্বে শুরু হউক। এই পঁচিশে বৈশাখেই নয় কেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.