সম্পাদকীয় ১...
এই বার নিজে করুন
পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম অথবা তাঁহার পূর্বসূরি প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্য লইয়া নেহাত কম ব্যতিব্যস্ত হন নাই। কেন এমন নাজেহাল অবস্থা, সেই প্রশ্নের উত্তরে তাঁহারা একটি কথা বারংবার বলিয়াছেন— আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এতই খারাপ যে কিছু করিবার নাই। ইহা অনৃতভাষণ ছিল না। ২০০৮ হইতে বিশ্ব-অর্থনীতির অবস্থা যতখানি খারাপ হইয়াছে, এবং যে দীর্ঘ সময় জুড়িয়া সেই অবস্থা চলিয়াছে, তাহার একমাত্র তুলনা ১৯৩০-এর মহামন্দা। অবস্থা ফিরিতেছে, এমন কথা বলিবার কারণ এখনও নাই, তবে দীর্ঘ দিন পরে একগুচ্ছ সুসংবাদ পাওয়া গেল। এবং কার্যত একযোগে। মার্কিন অর্থনীতি ঘুরিয়া দাঁড়াইবার ইঙ্গিত দিতেছে। সে দেশে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হইয়াছে। ডাও জোন্স সূচক সর্বকালের চড়া হারে পৌঁছাইয়াছে। মানুষ ফের ঝুঁকি লইতে তৈরি, ফলে সোনার মতো ‘অচল’ সম্পদে বিনিয়োগের প্রবণতা কমিতেছে। সোনার দাম কমিতেছে। অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের দামও নিম্নমুখী। এপ্রিলের ১২ হইতে ১৫ তারিখের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম কমিয়াছে দেড় শতাংশ, সোনা সাত শতাংশ। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের অনুমান, ২০১৩ সাল জুড়িয়া তেলের দাম কমই থাকিবে। গোটা দুনিয়া জুড়িয়াই বৃদ্ধির হার বাড়িবার সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হার ইতিমধ্যেই বাড়িয়াছে। ইউরো অঞ্চলের বিপদও অনিয়ন্ত্রিত নহে। সাইপ্রাসের পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত, তবে দেশটির আর্থিক গুরুত্ব এতই কম যে আশা করা যায়, তাহা গোটা দুনিয়াকে খুব বেশি প্রভাবিত করিবে না। বরং, বড় আশঙ্কার কারণ ইতালির রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।
খবরগুলি ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর কানে নিশ্চয়ই মধুর স্বরে বাজিতেছে। সোনা এবং পেট্রোলিয়ামের দাম কমিবার অর্থ, বৈদেশিক বাণিজ্যের খাতে চলতি খাতায় ঘাটতির হার কমিবে। তেলের দাম ব্যারেলে এক ডলার কমিলে ভারতে তেল আমদানির খরচ কমে ৯০ কোটি ডলার। অর্থমন্ত্রী অতি সঙ্গত কারণেই এই ঘাটতি লইয়া বিচলিত ছিলেন। উন্নত বিশ্বের আর্থিক স্বাস্থ্য ফিরিলে ভারতের রফতানিও বাড়িবে। তাহাও চলতি খাতার ঘাটতি কমাইতে জরুরি। বিনিয়োগে আগ্রহ ফেরাও তাঁহার পক্ষে সুসংবাদ। তিনি সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার ভারতে বিদেশি লগ্নির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। বাজারে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের জোগান বাড়িলে তাহার ভাগ ভারতেও পৌঁছাইবে বলিয়া তিনি আশা করিতে পারেন। বৈদেশিক সুসংবাদের পাশাপাশি ভারতেও কিছু ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাইতেছে। মূল্যস্ফীতির হার ছয় শতাংশের নীচে নামিয়াছে। মার্চের ৫.৯৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার গত তিন বত্‌সরের সর্বনিম্ন। বর্ষা স্বাভাবিক হইবে বলিয়াই পূর্বাভাস। দেশে ভোগব্যয়ের পরিমাণও বাড়িতেছে। ঘরে-বাহিরে এতখানি অনুকূল পরিস্থিতি সাম্প্রতিক অতীতে কোনও ভারতীয় অর্থমন্ত্রী আশাও করেন নাই।
এই প্রেক্ষিতে দেখিলে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার সম্বন্ধে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের নূতন পূর্বাভাসটি খানিক বেখাপ্পা ঠেকিতে পারে। আই এম এফ তাহার জানুয়ারির পূর্বাভাস হইতে ০.২ শতাংশ ছাঁটিয়া জানাইয়াছে, এই বত্‌সর ভারতে ৫.৭ শতাংশ হারে আয়বৃদ্ধি হইবে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে ৬.১-৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধির হারের কথা বলিয়াছিলেন, আই এম এফ-এর পূর্বাভাস সেই তুলনায় অনেকখানি কম। সম্ভবত তাহার অনুমানই তুলনায় যথাযথ প্রতিপন্ন হইবে। তাহার প্রথম কারণ, গত তিন বত্‌সর দেখা গিয়াছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বাভাস অনাবশ্যক রকম আশাবাদী। এই বারও তাহা হয় নাই, সে প্রমাণ কোথায়? দ্বিতীয়ত, আই এম এফ ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রাখিয়াছে। বিদেশি বিনিয়োগ টানিয়া বৃদ্ধির মরা গাঙে বান আনিতে হইলে বহু বকেয়া সংস্কার করিয়া ফেলিতে হইবে। ভর্তুকির বোঝা কমাইতে হইবে। পরিকাঠামো উন্নয়নের পথে হাঁটিতে হইবে। লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়িয়া গিয়াছে। অর্থমন্ত্রীর কি আর সংস্কার করিবার মতো সময় আছে? তবে, এই বার যাহা হইবে, তাহার দায় সরকারের। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অজুহাতটি সম্ভবত ক্রমে দুর্বল হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.