এত দিন ব্যাঙ্ক বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের অ্যাকাউন্টে হানা দিয়েছে সাইবার জালিয়াতেরা। এ বার তাদের থাবা পড়ল শহরের এক গবেষকের বিদ্যে-বুদ্ধির সম্পদেও!
সম্প্রতি এমনই এক অভিযোগ পেয়ে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, গত ২৮ মার্চ বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক অনামিকা বসু অভিযোগ করেন, তাঁর এবং কয়েক জন সহকর্মীর লেখা কয়েকটি গবেষণাপত্রে তাঁর (অনামিকা) নামের বদলে অন্তিককিরণ বসু নামে অন্য এক জনের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ তদন্তে নামলেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। অভিযোগের দিক থেকেও এটি বেশ অভিনব বলে তদন্তকারীদের দাবি। সাম্প্রতিক কালে এমন ধরনের কোনও অভিযোগ মিলেছে বলে লালবাজারের কর্তারা মনে করতে পারছেন না।
অনামিকা জানান, তিনি বোস ইনস্টিটিউটে মলিকিউলার মেডিসিন নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে গবেষক রথীন্দ্রনাথ বড়াল ও আরও কয়েক জনের সঙ্গে কয়েকটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন। সেগুলি সরকারি ওয়েবসাইটেও রয়েছে। কিন্তু একটি বেসরকারি ওয়েবসাইটে সেই গবেষণাপত্রগুলিতে অনামিকার নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরির বদলে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অনামিকা বলেন, “গত ২৮ তারিখে ইন্টারনেট সার্চ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে পড়ে। এর পরে সে দিনই কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করি।”
বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষক রথীন্দ্রনাথ বড়ালও। তিনি বলেন, “আমাদের গবেষণাপত্রে কী ভাবে নাম বদলে গেল, তা বুঝতে পারছি না।” তাঁদের গবেষণাগারের নাম বদলে অন্য প্রতিষ্ঠানের করে দেওয়ার জন্য তাঁরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার কথা ভাবছেন বলে জানান রথীন্দ্রনাথবাবু।
কিন্তু কে এই অন্তিককিরণ বসু?
অনামিকা ও রথীন্দ্রনাথবাবু, দু’জনে কেউই অন্তিককিরণ বসু নামে কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন। ঘটনাটি কী হয়েছে, তা না জেনে সরাসরি কোনও বিবৃতি দিতে চাননি ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি তদন্তকারীদের দাবি, অন্তিককিরণ বসুই যে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা-ও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, অপরাধীরা কোনও নিরীহ লোকের নাম ভাঁড়িয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, এই ঘটনায় ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস্’ লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ‘ব্লক’ করে দেওয়া হয়েছে ওই গবেষণাপত্রগুলিও। তবে তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি ওই কর্তা। |