ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগঢ়-সহ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় নাশকতায় ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন অস্ত্রসম্ভার কলকাতার কারখানায় তৈরি ও জোড়া দেওয়া হত। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়েছেন। গত ১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানার একটি এফআইআরের তদন্ত ভার নিয়েছে এনআইএ। ওই মামলার প্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল দিল্লিতে এনআইএ-র সদর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তারই তদন্তে নেমে কলকাতায় এসেছিলেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের অনুমান কলকাতার কারখানা থেকেই মাওবাদীরা নাশকতা চালানোর অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি করেছিল।
গত বছর ২৫ জুলাই রাতে কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানার ফ্যান্সি মার্কেট লাগোয়া একটি হোটেল থেকে মাওবাদীদের টেকনিক্যাল রিসার্চ আর্মস ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট (ট্রাম)-এর সদস্য মোহন বিশ্বকর্মাকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। মোহন বিহারের গয়ার ইনামগঞ্জ এলাকার নৌডিহা গ্রামের বাসিন্দা। কলকাতা থেকে মাওবাদীদের ঘাঁটিতে অস্ত্র পৌঁছানোর দায়িত্ব তাঁর উপরেই ন্যস্ত ছিল। সেই মোহনকে গ্রেফতার করার পরে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে ‘স্পেশ্যাল রিপোর্ট’ পাঠানো হয়। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সেই বিশেষ রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠায়। সেই রিপোর্ট ভাল করে দেখার পরে ওই মামলাটি এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাজ্যকে জানান হয়। রাজ্য সরকার সম্মতি দিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার এনআইএ-কে নিতে নির্দেশ দেয়।
মামলার দায়িত্বভার পাওয়ার পরে এনআইএ-র গোয়েন্দারা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলকাতায় এসে ওয়াটগঞ্জ-সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন। তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, কলকাতা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ উপকণ্ঠে মাওবাদীরা গা-ঢাকা দিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে এই অভিযোগ আসছে। মাওবাদীদের কয়েক জন তাত্ত্বিক নেতা কলকাতা থেকেই সংগঠন চালনা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও কলকাতার শহরতলি থেকে বেশ কয়েক জন মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মাওবাদীদের টেকনিক্যাল রিসার্চ আর্মস ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট (ট্রাম)-এর প্রধান সদুলা রামকৃষ্ণ কলকাতাতেই গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এনআইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বরানগর এবং মানিকতলার কয়েকটি লেদ কারখানায় হ্যান্ড গ্রেনেডের খোল তৈরি করাতেন। এ ছাড়া অস্ত্র জোড়া দেওয়া এবং সারানোর কাজও সেখানে হত। কাজ হয়ে গেলে সড়কপথে তা পাঠানো হত রাঁচিতে। কলকাতায় মোহন বিশ্বকর্মা নিয়মিত আসতেন। রাঁচিতে ট্রামের সদস্য অর্জুন গুঞ্জা হ্যান্ড গ্রেনেড-সহ সমস্ত অস্ত্র সংগ্রহ করতেন। রাঁচিতে মাওবাদীদের ঘাঁটিতে গ্রেনেডে বারুদ ঠাসা হত। পরে সেখান থেকে অস্ত্র জঙ্গলে মাও শিবিরে পৌঁছে যেত। পরে অর্জুনকেও গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীদের ধারণা, কলকাতায় অস্ত্র তৈরির অনেক সুবিধা রয়েছে। সাধারণত বড়বাজার ও ক্যানিং স্ট্রিট থেকে সস্তায় ধাতব সরঞ্জাম কেনা যায়। তারপরে শহরতলিতে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন লেদ কারখানায় আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়। এ ছাড়া কলকাতা থেকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যে সহজেই যাতায়াত করা যায়। সেই কারণেই অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য মাওবাদীরা এই শহরকে বেছে নিয়েছে বলে এনআইএ কর্তাদের অনুমান। |