ভারত-বাংলাদেশ স্থল-সীমান্ত চুক্তি নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের ধারাবাহিক দৌত্যে কিছুটা জট কেটেছিল। বিলকে সমর্থনের বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তিতে আজ এ ব্যাপারে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে পিছু হঠলেন তাঁরা।
সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে আজকের বৈঠকে নানা পরিসংখ্যান দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এই চুক্তির প্রবল বিরোধিতা করেন। তাঁর বক্তব্য, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই ঠিকই। কিন্তু খালি হাতে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়।’’ পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়িয়ে এই চুক্তির বিরোধিতা করেছে অসমের নেতৃত্বও। ফলে অনিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল-সীমান্ত চুক্তির ভবিষ্যৎ।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সলমন খুরশিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সুষমা স্বরাজ কেন্দ্রকে কথা দিয়েছিলেন যে সংসদে পেশ করা হলে চুক্তিটি সমর্থন করবেন তাঁরা। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় লালকৃষ্ণ আডবাণীরও। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়ে দেন যে নীতিগত ভাবে এই চুক্তি তাঁরা সমর্থন করছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির নেতৃত্বের বক্তব্য শুনে তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আজ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের শুরুতেই তাঁর বক্তৃতায় আডবাণী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য স্থল-সীমান্ত চুক্তি এবং ছিটমহল হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিজেপি-র মধুর সম্পর্কের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু এই চুক্তির বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন রাহুল সিংহ। বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ছিটমহল বিনিময় হলে আমরা পাব ৭ হাজার একর, কিন্তু দিতে হবে ১৭ হাজার একর। এতটা ক্ষতি করে এই চুক্তির কোনও অর্থ হয় না।” তাঁর বক্তব্য, জনসংখ্যার চাপও ভারতের উপর বেশি পড়বে। কেন না ছিটমহলের বাসিন্দাদের বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হলে ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা তো এখানে থাকবেনই, বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকেরাও ভারতেই থাকতে চাইবেন।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব যুক্তি দিয়েছে, রাজ্যের স্বার্থ দেখিয়ে মমতা যখন এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন, বিজেপি তাকে সমর্থন করলে পশ্চিমবঙ্গে দলের ক্ষতি হবে। রাহুল বলেন, “আমরা চাইব কংগ্রেস যেন সংসদে এই বিল আদৌ পেশ না করে। যদি করেও, আমরা ভোট তো দেবই না, বরং সংসদের ভিতরে ও বাইরে সর্বাত্মক বিরোধিতা করব।”
বিষয়টি মনমোহন সরকারের পক্ষে হতাশাজনক। তিস্তার জল বণ্টন ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে বছর খানেক ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক শীতলতা বেড়েই চলেছে। কথা ছিল, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে তা হয়নি। সীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন দরকার। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সমর্থন আশা করেছিল কেন্দ্র। দায়িত্ব পাওয়ার কিছু দিন পর বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, “এই চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের ভিতরে ঐকমত্য তৈরি করা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী বিরোধী দলনেতা, শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস দেশের স্বার্থে সকলে বিলটি সমর্থন করবেন।”
সলমন খুরশিদের এই আত্মবিশ্বাসের পিছনে ছিল আডবাণী-সুষমার আশ্বাস। তাঁরাও চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি হোক। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের জোরালো বিদ্রোহ উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষেও। ভবিষ্যতে জল কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার। |