গ্রেফতারির রায় শুনে কোর্ট থেকে উধাও মুশারফ, ঘাঁটি খামারবাড়ি
হাইকোর্ট গ্রেফতারের নির্দেশ দিতেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কোর্ট চত্বর থেকে উধাও হয়ে গেলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রাক্তন সেনানায়ক। আশ্রয় নিলেন নিজের খামারবাড়িতে। সেই বাড়ি ঘিরে ফেলল পুলিশ। তাঁকে নিয়ে আজ দিনভর দফায় দফায় এমন সব নাটকের পর সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, পারভেজ মুশারফ কি গৃহবন্দি হয়েছেন? রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই স্পষ্ট করেনি পাক সরকার।
২০০৭-এ জরুরি অবস্থার সময়ে প্রধান বিচারপতি ইফতিকার মহম্মদ চৌধুরি-সহ ৬০ জন বিচারক ও বিচারপতিকে আটক ও বরখাস্ত করার দায়ে এফআইআর ঝুলছিল মুশারফের মাথায়। এই মামলায় গত সপ্তাহে মুশারফ ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে ৬ দিনের অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন। আজই সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি নিয়ে আজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে মুশারফকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় কোর্ট। বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী বলেন, মুশারফ বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দায়ে অভিযুক্ত। বিচারপতিদের কাজ করতে না দেওয়া সন্ত্রাসের সামিল বলে মন্তব্য করে মুশারফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগেরও নির্দেশ দেন তিনি।
আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে মুশারফ সমর্থকেরা।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বরে। ছবি: এএফপি
নাটকের শুরু এর পরেই। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান মুশারফ। হাইকোর্ট চত্বরে মোতায়েন বিশাল নিরাপত্তাবাহিনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অসম্ভব দ্রুততায় ব্যক্তিগত কম্যান্ডোরা ৬৯ বছরের মুশারফকে তাঁর কালো কাচে ঢাকা বুলেটপ্রুফ এসইউভি-তে তুলে দেন। গোটা সময়টায় প্রায় হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নিরাপত্তাবাহিনী।
কোর্ট থেকে ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে চাক শাহজাদে নিজের বাগানবাড়িতে পৌঁছন মুশারফ। সর্বশেষ পাওয়া খবর বলছে, মুশারফ এখন সেখানেই রয়েছেন। খামারবাড়ির চতুর্দিকে পুলিশি পাহারা বসেছে। আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, মুশারফের ওই খামারবাড়িকে ‘উপ-কারাগার’ করা যায় কি না, ভেবে দেখা হচ্ছে। যে হেতু মুশারফের জীবন বিপন্ন, তাই তাঁকে গৃহবন্দি করাই ভাল বলে মনে করছে সরকার। তবে এ সম্পর্কে কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা হয়নি।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই মুশারফের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে যান। কিন্তু রেজিস্ট্রারের অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জামিনের আবেদনটি আজ আর গৃহীত হয়নি। অন্য একটি সূত্র বলছে, আইনজীবীদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশের কপি ছিল না। ফলে আইনজীবীদের কাল ফের আবেদন করতে বলা হয়েছে। মুশারফের মুখপাত্র রেজা বুখারির দাবি, “আইনে ওঁর আস্থা আছে। পাক সরকার মুশারফকে নিরাপত্তা দেয়। উনি পালাননি। নিরাপত্তাবাহিনীই ওঁকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ”
প্রায় চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর দেশে ফেরা ইস্তক কোর্টে যাতায়াত লেগেই রয়েছে মুশারফের। তাঁর ভোটে লড়া আটকে দিয়েছে কোর্ট। উপরন্তু, বেনজির ভুট্টো হত্যা মামলা, বালুচ নেতা নবাব আকবর বুগটির হত্যা মামলা, জরুরি অবস্থা জারির দায়ে দেশদ্রোহের মামলার মতো একাধিক মামলা ঝুলছে। আজ যে মামলাটিতে আদালত তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়, সেটির সূত্রপাত ২০০৯-এর ১১ অগস্ট। জরুরি অবস্থার সময় বিচারপতিদের আটক করার দায়ে মুশারফের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আর্জি জানিয়ে এফআইআর দায়ের করেছিলেন চৌধুরি মহম্মদ আসলাম ঘুম্মান নামে জনৈক আইনজীবী। বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও হাজির না হওয়ায় মুশারফের বিরুদ্ধে প্রথমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে নিম্ন আদালত। পরে হাইকোর্টও তাঁকে ফেরার ঘোষণা করে।
আজ শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তদন্তে সহায়তা করার শর্তে মুশারফকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করছেন না। বিচারপতি তখন বলেন, মুশারফ তদন্তে সাহায্য করতে বাধ্য। কিন্তু তিনি গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া মাত্রই পরিস্থিতি অন্য দিকে ঘুরে যায়। পরে মুশারফের কোর্ট থেকে উধাও হয়ে যাওয়াকে আলাদা অপরাধ হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এর আগে কোনও প্রাক্তন পাক সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার হতে হয়নি। মুশারফের সেই পরিণতি হলে সেনা ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া, মুশারফের বিচার শুরু হলে বর্তমান সেনাপ্রধান আশফাক কিয়ানির নামও উঠে আসতে পারে। জরুরি অবস্থা জারির সময়ে মুশারফের ঘনিষ্ঠ অফিসারদের অন্যতম ছিলেন কিয়ানি। মুশারফের অফিসের তরফে আজ ফেসবুকে বলা হয়েছে, “সম্ভবত এই নির্দেশ আক্রোশজনিত। আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত সংস্কারমুক্ত পদক্ষেপ করে আমাদের স্বস্তি দেবে।”
ভাগ্যের পরিহাস ছাড়া কী? সেই ইফতিকার চৌধুরির কাছেই স্বস্তির আশায় রয়েছেন পারভেজ মুশারফ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.