বৈশাখ পড়তেই যেন উত্সবের ধুম পড়েছে কালনায়। পুজো, বাজি পোড়ানো থেকে মেলা সবমিলিয়ে আনন্দে মশগুল হয়ে উঠেছেন কালনাবাসী।
মাসের প্রথম দিনেই বিরাট মাপের গণেশ পুজো দিয়ে শুরু হয় উত্সব। বাঘনাপাড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় পঁচিশ ফুটের এই মূর্তি সপ্তাহ দু’য়েক ধরে বানানো হয়। থাকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। এ বার মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। স্থানীরা জানান, প্রায় এক দশক ধরে কালনা শহর ঘেঁষা জিউধারা এলাকায় এই গণেশ পুজো হয়ে আসছে। দু’শোরও বেশি ব্যবসায়ী রয়েছে একসঙ্গে সারা বছর ব্যবসা ভাল চলার কামনা নিয়ে গণেশ বন্দনা করেন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মেলায় আশপাশের একচাকা, কেলনই, রাহাতপুর ইত্যাদি গ্রাম থেকেও মানুষ আসেন। এছাড়া কালনা ১ ব্লকের মধুপুর এলাকায় বহু বছর ধরে মা তারা-র পুজো হয়। বুধবার প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে গেলেও উত্সবের রেশ কাটেনি এখনও। গোপীশ্বর পুজোকে কেন্দ্র করেও প্রতি বছর মেতে ওঠে বাঘনাপাড়া গ্রাম। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজোয় প্রচুর বাজি পোড়ানো হয়। আর তা দেখতে ভিড় জমান বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। |
কালনার বাঘনাপাড়া স্টেশন চত্বরে গণেশ পুজো। |
আতসবাজির খেলা চলে সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ইসবপুর গ্রামেও। বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিন মনসা পুজো উপলক্ষে রাতের আকাশ জুড়ে চলে নানারকম বাজির খেলা। হরেকরকম বাজি দেখতে ভিড় জমান সুলতানপুর, রথতলা, ন’পাড়া, গোপালপুর, হরিশঙ্করপুর, সেনপুর-সহ নানা গ্রামের মানুষ। এই মেলা চলে টানা দশ দিন ধরে।
এ দিন থেকেই আবার শুরু হয় বাসন্তী পুজো। এসটিকেকে রোড ঘেঁষা নন্দগ্রামে এ বছর এই পুজোর সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। ফলে জৌলুস অন্যান্যবারের থেকে আরও বেশি। পুজোর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির, ভূমি ও বস্ত্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। উদ্যোক্তাদের তরফে অনিমেষ দেবনাথ জানান, পুজোর ক’দিন যাত্রা, বাউল গান, আঁকা প্রতিযোগিতা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে কালনা ২ ব্লকের তালা গ্রামের ঘোষ পরিবারের অন্নপূর্ণা পুজোও শুরু হয়েছে।
পারিবারিক এই পুজোয় আগে পাত পেড়ে খাওয়ানো হত আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদেরও। কিন্তু এখন দিন বদলেছে, বদলেছে অবস্থাও। শুধু এলাকাবাসীকেই নিমন্ত্রণ করা হয় এখন। পরিবারের সদস্য নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, “এলাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেন।” |
মন্তেশ্বরে দেবী চামুণ্ডাকে পুকুর থেকে তুলে আনছেন বাসিন্দারা। |
উত্সবে মেতেছে মন্তেশ্বরও। এলাকার মাইচপাড়ায় বৃহস্পতিবারের চামুণ্ডা পুজো উপলক্ষে আগের দিন রাত থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছে। বহু বছর আগে থেকেই এই পুজোয় এক বিশেষ বিধি মানা হয়। আগের রাতে মন্দির সংলগ্ন একটি পুকুরে দেবীকে রেখে আসেন পুরোহিত। পুজোর দিন দেবীকে পুকুর থেকে তোলা হয়। এরপর দেবীর যাত্রা শুরু। যাত্রাপথে গ্রামের বিভিন্ন বেদীতে দেবীর উদ্দেশ্যে পুজো করা হয়। পরের দিন দেবীকে আবার গ্রামে ঘোরানো হয়। শেষ দিন সিঁদুর খেলার পর দেবীকে মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুজোর পাশাপাশি যাত্রার আসরও বসেছে মেলায়।
|