লো-ভোল্টেজের জেরে বর্ধমানের বাঁকুড়া মোড়ে লোকসানে চলছে বেশ কয়েকটি চালকল ও অন্য শিল্প। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় চালকলের উত্পাদন মার খাচ্ছে। বিপাকে পড়েছে প্রায় ১৫টি শিল্পসংস্থা। ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে দু’টি চালকল।
রাজ্য বিদ্যুত্ বণ্টন দফতরের তরফে এই সমস্যার কথা স্বীকার করা হয়েছে। দফতরের বর্ধমানের রিজিওন্যাল ম্যানেজার কল্যাণকুমার ঘোষাল বলেন, “খণ্ডঘোষের সাবস্টেশনটির ক্ষমতা যা ক্ষমতার প্রায় সবটাই ব্যবহৃত। বাঁকুড়া মোড়ে যে ফিডার লাইনটি রয়েছে, তার উপরে চাপ বাড়তে বাড়তে ‘ওভার লোড’ হয়ে যাচ্ছে। তাতেই বাঁকুড়া মোড়ের ওই শিল্পগুলিতে ‘লো-ভোল্টেজ’য়ের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা খণ্ডঘোষ ও সেহারাবাজারের দু’টি সাবস্টেশনের ক্ষমতা ৬.৩ এমভি করে বাড়াবো। তাহলে ওই সমস্যা আর থাকবে না।” এই সাবস্টেশন দু’টির ক্ষমতা বাড়লে কেবল বাঁকুড়া মোড় নয়, উচালন এলাকার লো- ভোল্টেজের সমস্যাও মিটে যাবে বলে দাবি কল্যাণবাবুর।
তবে একটি চালকলের মালিক নিত্য মজুমদারের অবশ্য দাবি, “বোরো চাষের মরসুমেই বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের সমস্যা চরমে ওঠে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এলাকায় ধান চাষের জন্য প্রচুর সাবমার্সিবল পাম্প চলে। তার জন্য চলে হুকিংও। এই কারনেই বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেয়।” তাঁর অভিযোগ, ‘হুকিং’ রুখতে বিদ্যুত্ বণ্টন কোম্পানি নিষ্ক্রিয়। তবে দফতরের দাবি, ‘হুকিং’ রুখতে তাঁরা মাঝেমধ্যেই অভিযানে নামছেন।
বাঁকুড়া মোড়ের কাছে অবস্থিত খণ্ডঘোষের দইচাঁদার একটি তেল নিষ্কাশন সংস্থার মালিক সুনীল অগ্রবাল বলেন, “বিদ্যুত সরবরাহের ঘাটতির জেরে কারখানা চালানো দায় হয়ে পড়েছে। উত্পাদনের চেয়ে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রায় ১৫টি চালকল, তেল উত্পাদক সংস্থার মধ্যে দু’টিতেই ইতিমধ্যে তালা পড়ে গিয়েছে।” একটি চালকলের ম্যানেজার অমিত সাঁই বলেন, “আমাদেরই একটি চালকল শুধু এই লো-ভোল্টেজের কারণেই বন্ধ করে দিতে হয়। লাভ তো হচ্ছিলই না। উল্টে চালকল চালানোর খরচ অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছিল।” শ্রমিক মহম্মদ কুরবান জানান, ওই শিল্পগুলিতে প্রায় হাজার জন শ্রমিক যুক্ত। এই ভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের রোজগারে টান পড়বে।
মালিকদের দাবি, চালকল-সহ অন্যান্য শিল্প চালাতে হলে প্রতিদিন দরকার ১১০০০ ভোল্টের বিদ্যুত্। কিন্তু মাত্র ৬০০০ ভোল্টেজের বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হচ্ছে। ৫০০০ ভোল্টেজের ঘাটতিই সমস্যা। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশও। তাই তাঁদের দাবি, শিল্পগুলিকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্ দিতে আলাদা ফিডার লাইন করতে হবে।
কল্যাণবাবু বলেন, “এলাকার সাত-আটটি চালকল ও অন্যান্য শিল্পের মালিকেরা আমার সঙ্গে দেখা করে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়েছে, ওই শিল্পগুলির জন্য আলাদা একটি ফিডার লাইন টানা হবে। তার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, তার কিছুটা শিল্পগুলি বহন করবে। সেই কাজ সামনের সপ্তাহেই শুরু করা হবে।” |